জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল প্রসারিত করতে বিশ্বজুড়ে তেল ও কয়লা সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে বিশ্বব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তারা প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়টিতে অবগত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত সপ্তাহে পাঠানো ছয় পৃষ্ঠার এ চিঠিতে বিশ্বব্যাংকের প্রধান ইউরোপীয় শেয়ারহোল্ডার দেশ ও কানাডার প্রতিনিধিত্বকারী নির্বাহী পরিচালকরা ব্যাংকের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন হ্রাসের বিষয়টি নিশ্চিত করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে উন্নয়নশীল বিশ্বের বৃহত্তম তহবিল সরবরাহকারী এ ব্যাংককে আরো এমন পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
ইউরোপীয় কর্মকর্তারা লিখেছেন, আমরা মনে করি বিশ্বব্যাংকে এখন আরো এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং কয়লা-তেল সংক্রান্ত সব বিনিয়োগ বাদ দেয়া উচিত। ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে কেবল গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে একটি রূপরেখা তৈরি করা উচিত।
একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মকর্তারা মোজাম্বিকে মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পে ৬২ কোটি ডলার বিনিয়োগের বিষয়টি নোট করেছেন। তবে এটি বাতিল করার আহ্বান জানাননি।
বিশ্বব্যাংক এ চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এর সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু প্রকাশ করেনি। ব্যাংকটি উল্লেখ করেছে, বিশ্বব্যাংক ও তার সংগঠনগুলো গত পাঁচ বছরে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার সরবরাহ করেছে।
ব্যাংকটি উল্লেখ করেছে, বিশ্বব্যাংক ও তার সংগঠনগুলো গত পাঁচ বছরে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার সরবরাহ করেছে। বিশ্বব্যাংক একটি ই-মেইল বিবৃতিতে রয়টার্সকে বলেছে, আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের চিঠিতে আহ্বান করা অনেকগুলো উদ্যোগ এরই মধ্যে পরিকল্পনা করা হয়েছে কিংবা আমাদের ২০২১-২৫ সালের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির খসড়া তৈরির জন্য আলোচনায় রয়েছে। এটি আগামী মাসে চূড়ান্ত করার জন্য কাজ চলছে।
বিশ্বব্যাংক এ চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এর সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু প্রকাশ করেনি। ব্যাংকটি উল্লেখ করেছে, বিশ্বব্যাংক ও তার সংগঠনগুলো গত পাঁচ বছরে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার সরবরাহ করেছে।
আর্জওয়াল্র্ডের সর্বশেষ তথ্য বলছে, জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, তার সিংহভাগই হয়েছে গত পাঁচ বছরে। এ সময়ে নতুন প্রকল্পে সরাসরি অর্থায়ন, ঋণ, গ্যারান্টি ও মূলধনী বিনিয়োগ হিসেবে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে বিশ্বব্যাংক।
বৈশ্বিক উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে তাতে বিপর্যয় এড়ানোর জন্য আর বেশি সময় হাতে নেই বলে সতর্ক করে আসছেন বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণের কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়তে থাকায় সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে; ঝড়, বন্যা এবং খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ পাচ্ছে নতুন মাত্রা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এভাবে বাড়তে থাকলে এই শতকের মাঝামাঝি সময়েই পৃথিবীর নিচু এলাকাগুলোর শত কোটি মানুষকে বাস্তুহারা হতে হবে।
২০১৬ অর্থবছরে ব্যাংকটির প্রথম জলবায়ু পদক্ষেপ শুরু হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে ২০১৫ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে পুনরায় যোগদান করেছে এবং বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান ও মার্কিন পাবলিক ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু সমন্বিত বিনিয়োগের দিকে এবং উচ্চ-কার্বন বিনিয়োগ থেকে দূরে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩১৩
আপনার মতামত জানানঃ