ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ড (বরখাস্ত) কাউন্সিলর ইরফান সেলিমকে মাদক মামলা থেকেও অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (১মার্চ) ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান এ রায় দেন। পুলিশ ইরফানের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় আদালত এ মামলায় আর তদন্ত করার আদেশ দেননি। এর আগে অস্ত্র মামলা থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতায় উভয় মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন ইরফান সেলিম।
গত ৫ জানুয়ারি মাদক মামলা থেকে ইরফান সেলিমের অব্যাহতি দিয়ে আদালতে প্রতিবেদনটি জমা দেয় পুলিশ। সেদিন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনেরও অপর একটি মামলাতেও তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পুলিশ। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদন গ্রহণ করে সেই মামলায় অব্যাহতি দেন আদালত। দুটি মামলারই বাদী ছিল র্যাব।
গতবছর ২৫ অক্টোবর নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের গাড়িটি তাকে ধাক্কা মারে। এরপর তিনি সড়কের পাশে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান এবং নিজের পরিচয় দেন। তখন গাড়ি থেকে ইরফানের সাথে থাকা অন্যরা একসঙ্গে তাকে কিল-ঘুষি মারেন এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন। তার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালগালও করেন তারা।
এরপর ২৬ অক্টোবর সকালে ইরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মো. জাহিদুল মোল্লা, এ বি সিদ্দিক দিপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত দু-তিনজনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন ওয়াসিফ আহমদ খান। ওই দিনই পুরান পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটের দেবীদাস লেইনে হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালায় র্যাব। আটক করা হয় ইরফান ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে।
ওই ভবন থেকে দুটি অবৈধ পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করার কথা সে সময় র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। মদ আর ওয়াকিটকির জন্য ইরফান ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে তাৎক্ষণিকভাবে ছয় মাস করে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। দেবীদাস লেনে ওই অভিযানের মধ্যেই চকবাজারের আশিক টাওয়ারে ইরফানের ‘নির্যাতন কেন্দ্রের’ সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় র্যাব। পরে ইরফান সেলিমকে কারাগারে পাঠানো হয়। অস্ত্র ও মাদক আইনে আলাদা মামলা দায়ের করা হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পদ থেকেও বরখাস্ত হন তিনি।
র্যাবের ওই অভিযানের পর রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় হাজী সেলিমের ‘দখলদারিত্বের’ খবর আসতে থাকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয় তারাও হাজী সেলিমের ‘অবৈধ সম্পদ’ অনুসন্ধানে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।
ইরফান ও তার দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে দায়ের করা র্যাবের মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুরান ঢাকায় ইরফানদের বাড়িতে সেই অভিযান চালানো হয়। ভবনের চতুর্থ তলা থেকে জাহিদুল মোল্লাকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৪০৬টি ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। আর চতুর্থ তলার অপর একটি কক্ষ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল এবং ইরফান সেলিমের কক্ষ থেকে ১২টি বিয়ারের ক্যান উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছে, আগ্নেয়াস্ত্র বা মদ ও মাদক যে ইরফান সেলিমের, সে বিষয়ে সন্দেহাতীত কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পূর্ব থেকেই ধারণা করা হয়েছিল, যে শোরগোল তুলে এমপিপুত্র কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে মামলা হলো তা সময়ের ব্যবধানে ক্রমশ বিলীন হয়ে যাবে। এখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের জন্য কাজ করে না৷ তারা ক্ষমতারই পক্ষে কাজ করে৷ শুধু মাত্র ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তারা একটি পক্ষে সক্রিয় হয়৷ সাধারণ মানুষের জন্য নয়৷ এখানে প্রতিকার পেতে ক্ষমতা লাগে৷ যার ক্ষমতা বেশি সেই অন্যায় করে৷ আবার ক্ষমতা থাকলে প্রতিকারও পায়৷ এটাকে আইনের শাসন বলে না৷ তারা মনে করেন, আমাদের রাষ্ট্রে বিচারের এই বৈষম্য দূর না হলে দেশ থেকে অন্যায় অপকর্মও হ্রাস পাবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭০০
আপনার মতামত জানানঃ