খুলনা নগরীর গোয়ালখালী এলাকা থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাম সংগঠন শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেসবুক লাইভে কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বাম সংগঠন শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিন। সেই কর্মসূচির পোস্ট নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছিলেন রুহুল আমিন। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে তাকে ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদাপোশাকের পুলিশ। তিনি মুশতাক আহমেদের সঙ্গে গ্রেপ্তার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের খুলনার বাসায় ভাড়া থাকতেন। সেই বাসা থেকেই তাকে আটক করে খুলনা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
আজ শনিবার ( ২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপকমিশনার বিএম নুরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি অভিযোগে রাতেই রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ডিবি’র এক পরিদর্শক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে।’
শুক্রবার রাতে রুহুল আমিনের সঙ্গে আটক করা হয়েছিল শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সংগঠক নিয়াজ মুর্শিদকে। তবে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আজ শনিবার সকালের দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১০টার দিকে ডিবি ও কেএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি দল যৌথভাবে ওই বাসায় অভিযান চালায়। ওই সময় রুহুল আমিনসহ তারা কয়েকজন শ্রমিক রাজনীতি প্রসঙ্গে একটি অনলাইন লাইভ প্রোগ্রামে ছিলেন। সেখান থেকে তাদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিয়াজ মুর্শিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে রুহুল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আটক রাখা হয়। ওই সময়ই তারা জানতে পেরেছিলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।
রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে খুলনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই মিছিল শুরু হয়। সেখানে সমাবেশ শেষে মিছিলটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ হাদিস পার্কের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বক্তারা রুহুল আমিনের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি করেন। তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। কিছু বলতে গেলেই সরকার ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করায় ওই আইনে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দীর্ঘ ১০ মাসের মতো কারাগারে থাকার পর কারাগারেই মারা গেছেন মুশতাক আহমেদ। কিশোরের অবস্থাও ভালো নয়। আবার এটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নতুন করে একই আইনে মামলার শিকার হয়েছেন রুহুল আমিন। তারা অবিলম্বে রুহুল আমিনের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।
এদিকে কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে আজও রাজধানীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ, লেখক, ব্লগার, সংস্কৃতিকর্মীসহ ছাত্রদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।
বাম নেতারা বলেন, গতকাল আমাদের শান্তিপূর্ণ মশাল মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। সাতজনকে আটক করে রাখা হয়েছে, অনেকেই আহত হয়েছেন। অবিলম্বে আটককৃতদের মুক্তি দিতে হবে। আমরা বলতে চাই, এভাবে আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা অগণতান্ত্রিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই। একইসঙ্গে কার্টুনিস্ট কিশোরসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারকৃত সকলের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে জানানো হয়, আগামী ১ মার্চ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা এবং ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় শোক ও উদ্বেগ জানিয়েছেন অরগানাইজেশস ফর ইকোনমিক কোপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) ১৩টি দেশের ঢাকার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার। তারা এ ঘটনার দ্রুত, স্বচ্ছ, স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান তারা।
বিবৃতে তারা বলেন, গত বছরের ৫ মে থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) ধারায় বিচারপূর্ব আটক অবস্থায় ছিলেন মুশতাক আহমেদ। আমরা জেনেছি, বেশ কয়েকবার তাকে জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং আটক থাকা অবস্থায় তার প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। আমরা তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর একটি দ্রুত, স্বচ্ছ, স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাগুলো ও এর প্রয়োগে আমাদের সরকারগুলোর ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানের প্রতি বাধ্যবাধকতার সঙ্গে এ আইনের সামঞ্জস্য সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অব্যাহতভাবে আলোচনা চালিয়ে যাবো। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৫৫
আপনার মতামত জানানঃ