বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যসূচকে বিশ্ববাজারে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। টানা আট মাস ধরে দাম বাড়ায় তা এখন ২০১৪ সালের জুলাই-পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। নিত্যপণ্যের বাজারে করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব না কাটায় জানুয়ারি শেষেও দাম ঊর্ধ্বমুখী। শস্য, চিনি, ভেজিটেবল অয়েলের দাম বৃদ্ধিতে তা সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘভিত্তিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বৈশ্বিক পণ্যবাজারে গত বছর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল করোনা মহামারী। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণে গভীর সংকটে পড়েছে পণ্য বাণিজ্য। মন্দার ঝুঁকিতে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। মূলত ভুট্টার কারণে গত মাসে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু জানুয়ারিতে এ পণ্যের দাম বাড়ে ১১ দশমিক ২ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। চীনের ব্যাপক আমদানি ও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন কমায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এফএও বলছে, ডিসেম্বরে ভোজ্যতেলের গড় মূল্যসূচক ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে, যা নভেম্বরে ১৯ শতাংশ বেড়েছিল। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের পর ভোজ্যতেলের দাম ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ। ভোজ্যতেলের গড় মূল্য ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর ১৯ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে।
ডিসেম্বরে দুগ্ধজাত পণ্যের মূল্যসূচকও বেশ বেড়েছে। গড় মূল্যসূচক ১০২ দশমিক ২ পয়েন্ট, যা আগের মাসের চেয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। দাম বেড়েছে মাখন, পনির ও ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের। গুঁড়ো দুধের সামগ্রিক উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণেই এসব দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেড়েছে।
২০২০-২১ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী চিনির উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার খবরে পণ্যটির দাম ডিসেম্বর মাসে কমেছে। চিনির গড় মূল্যসূচক ৭৯ পয়েন্ট, নভেম্বর মাসের তুলনায় চিনির মূল্যসূচক কমেছে গড়ে দশমিক ৬ শতাংশ। মূলত ভারত ও ব্রাজিলে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণেই চিনির মূল্য কমেছে। মাংসের মূল্যসূচকও বেড়েছে আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ। আর বছরের হিসাবে ২০১৯ সালের চেয়ে গড় মূল্যসূচক ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে চীন। জার্মানি থেকে শূকরের মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি।
মূলত খাদ্যপণ্যের বাড়তি দামের মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের শুরু হয়েছিল। জানুয়ারিতে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ১০২ দশমিক ৫ পয়েন্ট। পরের মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৯৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে। মার্চ ও এপ্রিলে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল যথাক্রমে ৯৫ দশমিক ১ পয়েন্ট ও ৯২ দশমিক ৪ পয়েন্ট। মে মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আরও কমে ৯১ পয়েন্টে নেমে আসে, যা আগের ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
যদিও টানা কয়েক মাসের পতন কাটিয়ে গত জুন মাসে বেড়ে যায় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক। ওই মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ৯৩ দশমিক ১ পয়েন্ট। জুলাইয়ে এ সূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪ দশমিক ২ পয়েন্টে। আর আগস্টে তা পৌঁছে ৯৫ দশমিক ৯ পয়েন্টে, যা ছিল ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরে এ সূচক পৌঁছায় ৯৭ দশমিক ৯ শতাংশে।
জুন থেকে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ওই মাসে এ সূচক মান ছিল ৯৩ দশমিক ১ পয়েন্টে। জুলাই ও আগস্টে তা বেড়ে যথাক্রমে ৯৪ পয়েন্ট ও ৯৫ দশমিক ৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়। সেপ্টেম্বরে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ দশমিক ৯ পয়েন্টে। অক্টোবর ও নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আরো চাঙ্গা হয়ে যথাক্রমে ১০১ দশমিক ২ পয়েন্ট ও ১০৫ দশমিক ২ পয়েন্টে উন্নীত হয়। গত ডিসেম্বরে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ১২৭ দশমিক ৬ পয়েন্টে উঠেছে, যা ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। ২০২০ সালে এ সূচক মান তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়ে ৯৯ দশমিক ১ পয়েন্টে উঠেছে। করোনাকালে সয়াবিন তেল, পাম অয়েলের সরবরাহ কমে দাম বেড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪০২
আপনার মতামত জানানঃ