অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করার চেষ্টা করলে তা মানবে না বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার ম্যান্ডেট নেই।
বৈঠকে নেতাদের অভিমত, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর বিগত ১৬ বছরের লড়াই-সংগ্রাম ও ত্যাগের বিষয়গুলো উল্লেখ থাকতে হবে। ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়টি জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে নতুন কর্মসূচি হাতে নেবে দলটি।
গত সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে মানুষের মতামতে স্থানীয় সরকান নির্বাচন প্রাধান্য পাচ্ছে বলে সরকার গঠিত এসংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের যে বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ বিষয়ে নেতারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার কখনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে পারে না।
এ ধরনের কোনো নজির নেই। তাই আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। নির্বাচিত সরকারই স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। অন্য কোনো নির্বাচনের ভাবনা এখন আমাদের মধ্যে নেই।’
গত ৬ জানুয়ারি রাজধানীতে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। সেখানে কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতীয় পর্যায়ে সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও ঢাকার বাইরে মানুষের মতামতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রাধান্য পাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও এ মতামত আছে।
এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে আরো বলেন, যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তাদের এ ধরনের অভিপ্রায় থাকতে পারে। এ বিষয়ে কেউ সরকারকে চাপ সৃষ্টি করতে চাইলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
বৈঠকে নেতাদের কেউ কেউ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সরকারি সহযোগিতায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। সেই দলকে সংগঠিত করা এবং সারা দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত করতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। সে জন্য তারা দ্রুত নির্বাচন চায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তাঁরা মনে করেন, এই ঘোষণাপত্রে তাদের বিগত ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগের স্বীকৃতি থাকতে হবে। কারণ হঠাৎ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়নি। গত ১৬ বছর সরকার পতনের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। এ সময় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী গুম-খুন, বিচার-বহির্ভূত হত্যা, হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। সুতরাং এই গণ-অভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফল নয়।
দলীয় সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসলে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের অবস্থান জানাবে। এ ছাড়া বিএনপি তাদের ১৬ বছরের আন্দোলন ও ত্যাগের বিষয়ে জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে কর্মশালা ও সমাবেশ করবে।
দেশে ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত বলে গত ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অভিমত দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টিতে আলোচনায় বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর। এটা নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। এটি করতে গেলে জটিলতা বাড়বে।
বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ