দেশে বৈধ ও অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের নাগরিকেরা। বৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশিদের মধ্যে তাঁরা প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। ভিসা ও পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় অবৈধ হয়ে পড়া এই ভারতীয়রা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজও করছেন।
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এসবি বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের ওপর নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৯৭টি দেশের ১৩ হাজার ৫৭১ জন নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করেন। তাঁদের পাসপোর্ট বা ভিসার মেয়াদ অনেক আগে ফুরিয়ে গেছে। আত্মগোপনে থেকে তাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে কাজও করেন। কাগজে-কলমে তাঁদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা ৭ হাজার ৪৭২ জন। তবে কাগজপত্রের বাইরে অবৈধভাবে কয়েক লাখ বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। যাঁদের সিংহভাগই ভারতীয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল রোববার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে কোনো অবৈধ বিদেশি নাগরিককে থাকতে দেওয়া হবে না। অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। তবে কতজন অবৈধ নাগরিক আছেন, সেই পরিসংখ্যান নেই বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তিতে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায়, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়।
এসবি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত দেশে অবৈধভাবে বসবাস করা বিদেশিদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ১ হাজার ১৭ জন, চীনের ৯৮১, শ্রীলঙ্কার ১৮৭, যুক্তরাজ্যের ২৩১, কানাডার ৯৭, নাইজেরিয়ার ৪৬১ জন রয়েছেন।
বাংলাদেশে বৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের মধ্যেও শীর্ষে ভারতীয়রা। তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ৫৪৭ জন। তাঁদের মধ্যে ভারতীয় ৩৫ হাজার ৩২৭ জন, চীনের ১৩ হাজার ৪০৪, দক্ষিণ কোরিয়ার ৫ হাজার ৫৫, শ্রীলঙ্কার ৩ হাজার ৭৮৫ জন নাগরিক রয়েছেন।
একটি সূত্র বলেছে, দেশে দক্ষ ব্যবস্থাপকের অভাব ও শিল্প খাতে অভিজ্ঞ জনশক্তি না থাকায় বিদেশি কর্মজীবীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০১টি দেশের নাগরিকদের কাজের ১৬ হাজার ৩০৩টি আবেদন অনুমোদন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি।
অভিবাসন খাতের বিশেষজ্ঞ সি আর আবরার বলেন, বৈধভাবে কাজ করা বিদেশি নাগরিকদের সঠিক ভিসা রয়েছে কি না, সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি। বৈধ ও অবৈধ—উভয় ধরনের বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রেই ফারাক স্পষ্ট হওয়া দরকার।
অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩৩ ধরনের ভিসা দেওয়া হয়। তবে অনেকে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করছেন। বিশেষ করে ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’ এবং ব্যবসায়িক ভিসা ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। চীনা নাগরিকেরা চীনের বিনিয়োগ করা প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। ভারতীয় নাগরিকদের অনেকে ভ্রমণ ভিসায় এসে বিভিন্ন চাকরি বা ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য শোনা যাচ্ছে। একজন উপদেষ্টা তাঁর ফেসবুকে লিখেছিলেন, ২৬ লাখ অবৈধ ভারতীয় বাংলাদেশের চাকরি করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে এই সতর্কবার্তা কি না—গতকাল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোন উপদেষ্টা ফেসবুকে এটা দিয়েছেন, তা তিনি জানেন না। তাই তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।
আপনার মতামত জানানঃ