ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের বিজ্ঞানীরা প্রাচীন রাম সেতুর সমুদ্রের নীচের একটি মানচিত্র তৈরি করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁদের রিসার্চে প্রথম রাম সেতুর জটিল কাঠামোর বিশদ বিবরণ মিলেছে। ২০১৮ সাল থেকে স্যাটেলাইটে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে রাম সেতুন নিমজ্জিত অংশের পূর্ণ দৈর্ঘ্যের একটি ১০ মিটার রেজোলিউশনের মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন রাম সেতু আসলে একটি প্রাকৃতিক গঠন।
অ্যাডামস ব্রিজকেই ভারতীয়রা রাম সেতু হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এটি চুনাপাথরের তৈরি একটি সেতু যা শ্রীলঙ্কার মান্নার এবং তামিলনাড়ুর রামেশ্বরণ বা পামবান দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত। এবার সেই রাম সেতুরই রহস্য ফাঁস করলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। নাসার আইসিইস্যাট-২ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে রাম সেতুর সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত থাকা অংশের মানচিত্র তৈরি করে ফেললেন ইসরোর যোধপুর এবং হায়দরাবাদ ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারের গবেষকরা।
২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ওই স্যাটেলাইটের তথ্য ব্যবহার করে রাম সেতুর ডুবে থাকা অংশের পূর্ণ্য দৈর্ঘ্যের একটি ১০ মিটার রেজোলিউশনের মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে।
রামায়নেও এই রামসেতুর উল্লেখ রয়েছে। রামায়ণের কাহিনী অনুসারে, শ্রীলঙ্কা অর্থাৎ তৎকালীন লঙ্কায় যাওয়ার জন্য বানর সেনার সাহায্যে সমুদ্রের উপর এই সেতু তৈরি করেছিলেন ভগবান রাম। তবে, অনেকেই দাবি করেন, রাম সেতু আসলে একটি ‘ন্যাচারাল স্ট্রাকচার’। কিন্তু কী উঠে এসেছে ইসরোর মানচিত্রে?
বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে এই আন্ডারওয়াটার অংশটি ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যুক্ত একটি স্থল সেতু ছিল। খ্রীস্ট পূর্বাব্দ ৯ম শতাব্দীতে পারস্য নাবিকরা এটিকে ‘সেতু বান্ধাই’ নামে উল্লেখ করেন। এর অর্থ সমুদ্রের উপর একটি সেতু।
রামেশ্বরমের মন্দিরগুলির নথি থেকে জানা যায় সেতুটি ১৪৮০ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের উপর ছিল, পরে একটি ঘূর্ণিঝড়ে এটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
গিরিবাবু দান্ডাবাথুলার নেতৃত্বে গবেষক দলটি দেখেছে, রামসেতুর দুই পাশের তির্যক ঢাল অসামঞ্জস্য রয়েছে। এই ঢালের অসামঞ্জস্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, পক প্রণালির তুলনায় মান্নার উপসাগরের জলের বস্তুগত শক্তি বেশি।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রামসেতুর প্রায় ৯৯.৯৮ শতাংশই অগভীর এবং অতি-গভীর জলে ডুবে থাকে। মাত্র ০.০২ শতাংশই সমুদ্রের উপরে থাকে এবং তা উপর থেকে দেখতে পাওয়া যায়। তাঁরা আরও দেখেছেন, রাম সেতুর কাঠামো বরাবর ১১টি সংকীর্ণ জলের চ্যানেল আছে। এই চ্যানেলগুলি থেকেই মান্নার উপসাগর এবং পক প্রণালির মধ্যে জল প্রবাহিত হয়। এই চ্যানেলগুলি থাকার জন্যই সমুদ্রের ঢেউয়ের থেকে রক্ষা পেয়েছে রামসেতুর কাঠামো।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা ICESat-2 এর সবুজ লেজার ব্যবহার করেছেন যা গভীরতার তথ্য পেতে ৪০ মিটার গভীর পর্যন্ত সমুদ্রের তল সনাক্ত করতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের নীচে ডুবে থাকা সেতুটি আসলে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি। রামসেতু আসলে ভারতের ধনুশকোডি থেকে শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার দ্বীপ পর্যন্ত সমুদ্রের নীচে স্থলভাগের ধারাবাহিকতা বলে নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সায়েন্টিফিক রিপোর্টে ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘ধনুশকোডি এবং তালাইমান্নার দ্বীপের একটি নিমজ্জিত স্থলভাগের কন্টিনিউয়েশন রাম সেতু। গবেষণার মাধ্যমে এই বিষয়ে আণরা নিশ্চিত হয়েছি। এই সেতুটির অতি গভীর জলের মধ্যে হঠাৎ গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে।’
সমুদ্রের তলার এই সেতুর কাঠামো বরাবর ১১টি সরু চ্যালেন পাওয়া গিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, মান্নার উপসাগর এবং পাক স্ট্রেইটের মধ্যে জল প্রবাহকে সহজতর করে এগুলি সেতুর কাঠামোটিকে ঢেউয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে।
আপনার মতামত জানানঃ