মহাবিশ্বের যে একটা সূচনা হয়েছিল, তার সুস্পষ্ট ফল হলো—মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। সমস্ত পদার্থ, স্থান এবং সময় একটা একক সূচনা বিন্দুতে সৃষ্টি হয়েছিল—এর নাম বিগ ব্যাং। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার সমীকরণের সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে জর্জ লেমেইতার বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রস্তাব করেন।
১৯৬৪ সালের কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে সংগতি থাকায় খুব সহজেই সারা বিশ্ব তত্ত্বটি গ্রহণ করে।
শক্তিশালী রেডিয়ো তরঙ্গ নির্গত হয়, পরিবর্তন ঘটে নক্ষত্রের আকার, আকৃতি এবং সংখ্যারও। এই দিকগুলোই প্রমাণ করে এবং সমর্থন করে মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু বিগ ব্যাং তত্ত্বে মহাবিস্ফোরণের নিয়ামক হিসেবে কী ছিল! সেটা আজও অস্পষ্ট। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও এর যথাযথ দৃঢ় ব্যাখ্যা দিতে পারেন না কিংবা তাঁদের কাছে নেই।
কারণ পদার্থবিজ্ঞানে আমাদের জানা এমন কোনো সূত্র বা তত্ত্ব নেই যা দিয়ে মহাবিশ্বের অতিউত্তপ্ত ও ঘন পর্যায় ব্যাখ্যা দিতে পারে না।
এই ঘটনার ‘আগে’ কী ঘটতে পারে, সে সমন্ধে একটু বলে নেওয়া যাক। এক সেকেন্ডের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ সময়ে মহাবিশ্ব অতিস্বল্প সময়ের স্ফীত অবস্থার মধ্যে থেকেছে। ফলে আকার অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাই পরের সময়টাতে সম্প্রসারণ ঘটছে ক্রমাগত। সাথে শীতল অবস্থারও দেখা মিলেছে। প্রারম্ভিক সময়টাতে মৌলিক কণাগুলো তৈরি হয়। এদিকে মৌলিক বল তাদের বর্তমান প্রকৃতি লাভ করে কাজ শুরু করে।
বিং ব্যাং সময় ও স্থানের শুরুকে চিহ্নিত করে দেয়। আমরা এ থেকে বুঝতে পারি মহাবিশ্বের যা কিছু আজ দেখি—সমস্তই একটা ভয়াবহ বিস্ফোরণে জেগে উঠেছে মাত্র।
মজার বিষয়—বিগ ব্যাং শব্দটি প্রথমে বিদ্রুপাত্মক অর্থে ‘অপমান করতে’ ব্যবহার হয়েছিল। এই তত্ত্ববিরোধী ফ্রেড হোয়েল এই নামটি জনপ্রিয় করে তোলেন। ফ্রেড প্রচার শুরু করেন এর মুখোমুখি এক তত্ত্ব। স্থির-দশা তত্ত্ব। সম্প্রসারণরত এই মহাবিশ্বে প্রতিনিয়ত নতুন পদার্থের সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন নক্ষত্র, নতুন ছায়াপথ গড়ছে। নতুন সম্প্রসারণে পুরানো মহাকর্ষীয় বস্তুগুলো পর্যবেক্ষণের বাইরে চলে যাচ্ছে—এই ছিল তত্ত্বটি। স্থির-দশার এই মহাবিশ্বের রয়েছে নির্দিষ্ট ধ্রুব গড় ঘনত্ব। যেখানে সময়ের শুরু বা শেষ বলতে কিছু নেই। এই তত্ত্বের প্রয়োজনীয়তা অনেক আগেই হারিয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ