কয়েক শতাব্দী ধরে, এলিয়েনদের বিষয়টি সর্বদা অনেক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বিভিন্ন গবেষণা এলিয়েন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। এলিয়েনদের দেখতে কেমন হবে এবং তাদের রঙ কেমন হবে তা নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। গবেষকরা প্রথমবারের মতো শেয়ার করেছেন যে যদি কোথাও এলিয়েনদের অস্তিত্ব থাকে তবে তারা দেখতে কেমন হবে? তাদের দাবি আপনাকে হতবাক করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে অনুমান করছেন, পৃথিবীর বাইরে প্রাণ ও প্রাণীর অস্তিত্ব আছে। তবে আমাদের পৃথিবী যেমন সবুজ এবং আমরা এলিয়েনদের বিভিন্ন সায়েন্স ফিকশন সিনেমায় যেমনটা দেখি, সে রকম গাত্রবর্ণের না-ও হতে পারে।
পৃথিবীর নিখুঁত অবস্থা রয়েছে যা এতে জীবনকে সমর্থন করতে সহায়তা করে। সাধারণত, সবুজ রঙ জীবনের সঙ্গে জড়িত, যেখানে জীবের বিকাশ ঘটে এবং সালোকসংশ্লেষণ হয়। এখন, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুসারে, এলিয়েনরা বেগুনি হতে পারে, তবে সবুজ নয়। তারা অনুমান করে যে এলিয়েনরা পৃথিবীর মতো একটি গ্রহে বাস করছে, কিন্তু তা এই গ্রহের মতো সবুজ হবে না।
সম্প্রতি ব্রিটেনের রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এলিয়েনদের গায়ের রং হতে পারে পার্পল বা বেগুনি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের পৃথিবীতে ক্লোরোফিলের সালোকসংশ্লেষণের কারণে সবুজ হলেও প্রাণের উপস্থিতি আছে এমন গ্রহে আলোর উপস্থিতি কম হওয়ার কারণে অন্য কোনো ফটো পিগমেন্টের সংশ্লেষণে খাবার তৈরি হতে পারে। ফলে সেই গ্রহ অন্য কোনো রঙের হতে পারে। একইভাবে সেখানকার প্রাণীদের গায়ের রংও অন্য রকম হতে পারে।
আজ থেকে ২৪০ কোটি বছর আগে, আমাদের পৃথিবী এমন সবুজ ছিল না। সে সময় নীলচে সবুজ সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামের একধরনের শৈবাল প্রথম ক্লোরোফিল ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণ করেছিল এবং উপজাত হিসেবে প্রকৃতিতে অক্সিজেন অবমুক্ত করেছিল।
তার আগে, বিভিন্ন ধরনের অণুজীব রেটিনাল নামক একধরনের বেগুনি রঞ্জক অণু ও সূর্যালোক ব্যবহার করে শক্তি উৎপন্ন করত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি অন্য কোনো দূরবর্তী গ্রহে রেটিনালের উপস্থিতি থাকে, তবে বিভিন্ন অণুজীবের অনন্য ‘ছাপ’ মহাকাশভিত্তিক টেলিস্কোপ দ্বারা বোঝা যাবে বলে আশা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কার্ল সাগান ইনস্টিটিউটের গবেষক এবং এই নিবন্ধের প্রধান লেখক লিগিয়া ফনসেকা কোয়েলহো বলেছেন, ‘তারা (রেটিনলবিশিষ্ট অণুজীব) এরই মধ্যেই কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে আগের চেয়ে অনেকটাই বিবর্তিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু কল্পনা করুন, যদি তারা সবুজ গাছপালা, শেওলা ও ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে না মেশে, তবে একটি লাল সূর্য তাদের সালোকসংশ্লেষণের জন্য সবচেয়ে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে দিতে পারে।’
কোয়েলহো ও তাঁর দলের গবেষকেরা বলছেন, অণুজীব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় আমরা যে এলিয়েন তালাশ করছি, তা সবুজ রঙের হবে—এমন ঝোঁক আছে। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বেগুনি রঙের এলিয়েনও থাকতে পারে। বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার জন্য গবেষকেরা কর্নেল ইউনিভার্সিটির কেপ কডের অগভীর পুকুরে গভীর সমুদ্রের হাইড্রোথার্মাল ভেন্টসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা বেগুনি ব্যাকটেরিয়ার চাষ করছেন এবং সেগুলো কী ধরনের ‘ছাপ’ ফেলে, তা পরিমাপ করেছেন।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বেগুনি এই ব্যাকটেরিয়াগুলো শনাক্তযোগ্য বায়োসিগনেচার বা ‘জৈবিক ছাপ’ তৈরি করেছে। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পরবর্তী প্রজন্মের টেলিস্কোপের সহায়তায় এলিয়েনের খোঁজে নতুন তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করবে। এ বিষয়ে এই গবেষণার সহ-লেখক লিসা ক্যাল্টেনেগার বলেন, ‘আমরা কেবল আমাদের চারপাশের এই আকর্ষণীয় জগতের দিকে দৃষ্টি মেলে তাকাচ্ছি।
আপনার মতামত জানানঃ