চামড়ায় বাঁধানো বই কিংবা ডায়েরির ব্যবহার জীবনেও কখনো করেননি, এমন মানুষ বিরল। তবে সেই চামড়ার উৎস বোঝাতে যদি কসাইখানার দৃশ্য দেখানো হয়, তবে পুরো শরীর ঘিনঘিন করে উঠবে। তবে বাস্তবে তো তেমনটাই সত্যি।
কিন্তু সেই চামড়া যদি মানুষের হয় তাহলে? শুনলে ঠান্ডা স্রোত প্রবাহিত হবে শিরদাঁড়া বেয়ে। কারণ অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ জিনিস অবাস্তব নয় একেবারেই। রয়েছে প্রমাণও।
প্রায় দশ বছর আগের কথা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে উদ্ধার করা হয় ‘ডেস্টিনিজ অব দ্য সোল’ নামের একটি বই। সেটা নিয়েই শোরগোল পরে গিয়েছিল রীতিমতো। ইতিহাস খুঁড়তে গিয়ে জানা যায়, সেই বই নাকি বাঁধানো হয়েছে মানুষের চামড়ায়।
একটা বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে যেহেতু এত বিতর্ক, যেহেতু অযথা আলোচনা-সমালোচনার শেকড় উপড়ে ফেলা প্রয়োজন। গবেষণার টেবিলে প্রচ্ছদটি নিয়ে বসলেন বিজ্ঞানীরা। পিএমএফ, ম্যাট্রিক্স-অ্যাসিস্টেড লেসার ডিসর্পশন পদ্ধতিতে প্রমাণ দিয়েছিলেন সেই চামড়া আসলে মানুষের। তবে এখানেই শেষ নয়। জানা গেল, সেটি একটি নারীর চামড়া।
১৯৩৪ সাল থেকে বইটি স্থান পায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফটন লাইব্রেরিতে। এরপর একটা পর্যায়ে বইটির মলাট নিয়ে সন্দেহ হওয়ার পর ব্যাপক অনুসন্ধান চালান বিজ্ঞানী ও পর্যবেক্ষকরা। অবশেষে ২০১৪ সালে এসে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হন গবেষকরা। বইটির মলাটে মানুষেরই চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে বলে শতভাগ নিশ্চিত হন তারা।
এরপর এক দশক ধরে বইটি মানব চামড়ার মলাটেই সংরক্ষিত থাকলেও দু-দিন আগে সেই মলাট সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। অনেক বিবেচনা ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। অজ্ঞাত ওই নারীর এই দেহাবশেষের সম্মানজনক সৎকারের পাশাপাশি এখন ওই নারীর জীবন নিয়েও গবেষণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাফটন লাইব্রেরি।
অবশ্য কেন মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাইয়ের মতো ‘উদ্ভট’ কাজটি করেছিলেন ওই ব্যাখ্যাও বইয়ের ভেতর একটি চিরকুটে দিয়ে গিয়েছিলেন ডা. বোল্যান্ড। চিরকুটে ওই চিকিৎসক লিখেছিলেন, “মানবআত্মা নিয়ে লেখা একটি বই অবশ্যই মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধাই হওয়ার দাবি রাখে।”
আজকাল মানুষের চামড়া দিয়ে বই মলাট করাকে উদ্ভট বা ঘৃণ্য কাজ হিসেবে গণ্য করা হলেও এক সময় অবশ্য এর প্রচলন ছিল। বোল্যান্ড লিখেছিলেন, ‘‘ষোড়শ শতাব্দী থেকে ‘এনথ্রোপোডার্মিক’ শব্দটি বেশ প্রচলিত, যার অর্থ হচ্ছে মানুষের চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট করা। ওই শতকে এর প্রচলন ছিল।’’
তখন কেউ অপরাধ করলে তার চামড়ায় তা লিখে দেওয়া হতো। অনেক সময় কেউ কেউ মরে যাওয়ার পর তার চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট বানিয়ে তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের অনুরোধও করে যেতেন।
এই বইটি আবিষ্কারের পরে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠে আসে সারা পৃথিবীর মোট ৫০টি বই। দাবি ওঠে সেগুলিরও ওপরের মলাট তৈরি মানুষের চামড়ায়। তবে ২০১৯ সালের শেষে পরীক্ষার পরে দেখা গিয়েছিল তার মধ্যে ১৮টির ক্ষেত্রে সত্যি এই ঘটনা। এমনকি এই বইগুলির মধ্যে রয়েছে জন মিল্টনের একটি কবিতার বইয়ের সংস্করণও। বাকিগুলো কোনো গবাদি পশুর চামড়াতেই তৈরি।
আপনার মতামত জানানঃ