ষাটের দশকে চলেছে মাওয়ের ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’। আর সে সময়ই মাও সরকার নিষিদ্ধ করে বিথোভেন ও মোৎজার্টের মতো কালজয়ী সুরস্রষ্টার সংগীত। মাওয়ের মতে, এসব সংগীত বৈপ্লবিক সময় ও সমাজের আগে সৃষ্ট।
কেবল সংগীত নয়, মাও সরকারের কোপানলে পড়েছিল সামান্য চড়ুই পাখিও। মাও সে-তুং ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত চীনে ‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড’ নামে এক আন্দোলন শুরু করেন। মাও বলেন, ইঁদুর, মশা, মাছি আর চড়ুই পাখি হলো মানুষের শত্রু। এসব মেরে ফেলতে হবে। মাওয়ের কথায় চীনের সবাই ইঁদুর, মশা, মাছি আর চড়ুই পাখি মেরে ফেলতে শুরু করল। সেনাসদস্য থেকে সাধারণ মানুষ, সবাই অংশ নিল এতে।
চড়ুই পাখির ফলে মানুষের মৃত্যুর কথা কেউ ভাবতে পারে না। অথচ বাস্তবে এমনটা ঘটেছিল। ১৯৫৮ সালে মাও জে দং-ই তখন চীনের ‘রাজা’ ছিলেন। পাশাপাশি পিপল রিপাবলিক অব চায়নার সর্বময় চেয়ারম্যান।
তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে, চড়ুই নিধন করতে হবে। একটা কী দশটা নয়, চীন থেকে চিরকালের মতো চড়ুই নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলেন মাও।
দক্ষযজ্ঞে’র জন্য কেনা হল ১ লাখ চড়ুই নিধন অভিযানের নিশান। খুদে পাখি মারতে মেতে উঠল গোটা দেশ। যারা এই কাজে এগিয়ে এল তাদের নাম হল ‘স্প্যারো আর্মি’। এমনকি চড়ুই মারায় উত্সাহ দিতে পুরস্কার ঘোষণা করল রাষ্ট্র। একাধিক পদ্ধতিতে মারা হল পাখি। উন্মত্ত জনতা ড্রাম বাজিয়ে ধাওয়া করত পাখির ঝাঁকের পিছনে।
খেতের কীট-পতঙ্গ মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন মাও জে দং। এতখানি তত্পরতার পিছনে আরেক কারণ, কমিউনিস্ট চীনে ততদিনে ব্যক্তির খেত-খামারের অস্তিত্ব নেই। সবটাই রাষ্ট্রের সম্পত্তি। অতএব, রাষ্ট্র নেমে পড়ল তার খামারের সুরক্ষায়।
আদপে যা চীনের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। বিশ্বস্ত বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মাও জানলেন, একটি চড়ুই বছরে ৪-৫ কেজি শস্য খায়। হিসেবে করে দেখা গেল, ১০ লাখ চড়ুই ৬০ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলে।
শোনা যায়, শেষে উড়ান-ক্লান্ত পাখি মাটিতে পড়ে মারা যেত। খুঁজে খুঁজে ভাঙা হল চড়ুইয়ের বাসা, নষ্ট করা হল ডিম। জাল দিয়ে ধরা হল। বাকি পাখি মারা হল বন্দুক দিয়ে। অচিরেই মাওয়ের ইচ্ছা মতো চড়ুইশূন্য হল চীন। চড়ুই নিধনের কারণে কয়েক বছর পরে কালো দুর্ভিক্ষের দিন দেখল দেশ ।
আসলে চড়ুই শস্যের কিছু অংশ খেত ঠিক, তেমনই ফসল ধ্বংসকারী পোকামাকড়ও খেত পুচকে পাখির দল। বেপরোয়া চড়ুই নিধনে নষ্ট হয় সে বছরের সিংহভাগ ফসল। ১৯৬১-৬২ সালের সেই ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষে ৩-৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
শস্যক্ষেত্রে কোনও ফসল না থাকলেও সরকারি গুদামে তখন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ ছিল। কিন্তু তবুও কোনও এক অদ্ভুত অজানা কারণে সেসব খাদ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আপনার মতামত জানানঃ