যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেইনে সৈন্য পাঠায় তবে মস্কো সেটিকে যুদ্ধ উত্তেজনা বৃদ্ধি বলে বিবেচনা করবে জানিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে সতর্ক করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার দেশ পরমাণু যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
পুতিনের এই হুমকির পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি তার হাতে থাকা পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার। এখনও পর্যন্ত রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। বিশ্বের মোট পারমাণবিক অস্ত্রের ৯০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ এই দুই দেশের হাতে।
রাশিয়ার হাতে ঠিক কি পরিমাণ পরমাণু অস্ত্র আছে এবং কে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রাশিয়ার কাছে কত পরমাণু অস্ত্র আছে?
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার এখন রাশিয়া হাতে। দেশটি বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের মালিক।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইন্টিস্টস (এফএএস) এর তথ্যানুযায়ী, পুতিনের হাতে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার ৫৮০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড রয়েছে। যদিও সেগুলোর মধ্যে প্রায় ১২শ’টির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে মেয়াদ শেষ হলেও বেশিরভাগই এখনও অক্ষত। আর প্রায় চার হাজার ৩৮০টি দীর্ঘ পাল্লার স্ট্র্যাটেজিক লঞ্চার ও স্বল্প-পাল্লার ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার ফোর্স রয়েছে রাশিয়ার অস্ত্রভাণ্ডারে।
স্নায়ু যুদ্ধের সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ হাজার ওয়ারহেড ছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের ভাণ্ডারে সর্বোচ্চ সংখ্যাটি ছিল ৩০ হাজার।
কোনো পরিস্থিতিতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে?
কোন কোন পরিস্থিতিতে একজন রুশ প্রেসিডেন্ট পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে পারেন সে বিষয়ে ২০২০ সালে একটি দিকনির্দেশনা প্রকাশ করে রাশিয়া। সেখানে বলা আছে: বিস্তৃতভাবে পারমাণবিক বা অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে শুধুমাত্র আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অথবা রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচলিত অস্ত্রের ব্যবহারের ফলে ‘যখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে’ তখন।
রাশিয়া কী আরো পরমাণু অস্ত্র পাবে?
‘২০২২ নিউক্লিয়ার পসচার রিভিউ’ তে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, রাশিয়া এবং চীন তাদের পরমাণু অস্ত্রের মজুদ বৃদ্ধি এবং আধুনিকীকরণ করছে।
এ বিষয়ে এফএএস তাদের ২০২৪ সালের বিশ্লেষণে জানায়, “যদিও রাশিয়ার পারমাণবিক বিবৃতি এবং হুমকিমূলক বক্তৃতা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তারপরও রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ২০২৩ সালে আমরা যে চলমান আধুনিকীকরণের কথা বলেছি তার চেয়ে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার এবং এর পরিচালনা কার্যক্রমে খুব সামান্য পরিবর্তনই এসেছে।”
রাশিয়া কী পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে?
যদি যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালায় তবে রাশিয়াও একই রকম পরীক্ষা করার কথা বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন পুতিন।
দ্য কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি (সিটিবিটি) তে রাশিয়ার যে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছিল গত বছর একটি আইন পাস করে পুতিন তা প্রত্যাহার করে নেন।
সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী রাশিয়া এখন পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর হাতে গোণা কয়েকটি দেশ পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯২ সালে, চীন ও ফ্রান্স ১৯৯৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্বশেষ পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯০ সালে।
রাশিয়া ১৯৯৬ সালে কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি (সিটিবিটি) তে সই করে এবং ২০০০ সালে চুক্তিতে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ সালে চুক্তিতে সই করলেও এখনও আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়নি।
রাশিয়ায় কে পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করেন?
রাশিয়ার আইনে দেশটির পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র দেশটির প্রেসিডেন্টের রয়েছে। রাশিয়ার তথাকথিত ‘নিউক্লিয়ার ব্রিফকেস’ সব সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সামরিক বাহিনীর প্রধানের কাছেও তেমন ব্রিফকেস থাকে বলে ধারণা করা হয়।
মূলত, ব্রিফকেস হল একটি যোগাযোগের হাতিয়ার যা প্রেসিডেন্টকে তার সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে এবং তারপরে অত্যন্ত গোপন ‘কাজবেক’ ইলেক্ট্রোনিক কমান্ড-এন্ড-কন্ট্রোল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রকেট বাহিনীর সাথে সংযুক্ত করে।
কাজবেক অন্য একটি সিস্টেমকে সমর্থন করে। যেটির নাম ‘কাভকেজ’। যদি পরমাণু হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয় তবে পুতিন তার ‘ডেড হ্যান্ড’ ব্যবস্থা সক্রিয় করবেন। মূলত কম্পিউটারই ধ্বংসযজ্ঞ শুরুর সিদ্ধান্ত নেবে।
একটি নিয়ন্ত্রণ রকেট রাশিয়ার বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার থেকে পারমাণবিক হামলার নির্দেশ দেবে।
আপনার মতামত জানানঃ