বছরের শুরুতেই ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়াও এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে প্রায় প্রতিদিনই ধার করছে।
সংকট বেশি হওয়ায় ধারের মাত্রাও বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম চার দিনে ব্যাংকগুলো মোট ধার করেছে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে একদিন মেয়াদি ধারও আছে। যেগুলো ধার করার পরদিনই আবার পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু ওই ধার পরিশোধ করতে আবার অন্য উপকরণ থেকে ধার করছে।
সূত্র জানায়, আমানতের চেয়ে ঋণ প্রবাহ বেশি বাড়ায়, ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য কমে যাওয়ায়, নগদ টাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনায়, ঋণ আদায় কম এবং খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।
তারল্য সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর বা ট্রেজারি বিল পুনরায় কিনে নেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে বিশেষভাবে তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যাংক খাতে তারল্য প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। কিছুদিন পরেই তা আবার কমে যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের মধ্যে বুধবার ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২১ হাজার কোটি টাকা এবং এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে কলমানি মার্কেটসহ অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে।
এছাড়া বছরের প্রথম দিন সোমবার ধার করেছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০ হাজার ৫০০ কোটি এবং কলমানি মার্কেট থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি এবং কলমানি মার্কেট ও অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে করেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার কলমানি ও অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে ধার করেছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায় বছরের শেষ ও শুরুর দিকে ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকায় ভরপুর থাকে। কারণ, ওই সময়ে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয়। এ কারণে আমানতের ছড়াছড়ি থাকে। যে কারণে ব্যাংকগুলো ধার করে না। ফলে কলমানি মার্কেটের সুদহার ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে থাকে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম
বছরজুড়েই ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার সংকট গেছে। বছর শেষে এসে তা কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। কারণ, এই সময়ে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন ঘাটতির দেনা সমন্বয় করতে হয়েছে। নিজস্ব অর্থে ওইসব ঘাটতি সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি বলে ধারের মাত্রা বেড়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়ার মাত্রা আরও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি সমন্বয় করতে কিছু বাড়তি সময়ও দেওয়া হয়েছে।
তারল্যের সংকট মেটাতে ব্যাংকগুলো বাড়তি আমানত সংগ্রহ করতে এর সুদের হার বাড়িয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক আমানতের সুদের হার ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাড়তি দামে রেমিট্যান্স কিনে তারল্যের প্রবাহ বাড়াচ্ছে।
আপনার মতামত জানানঃ