১৪ দলীয় জোটের শরিক দল এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে কোনো আপাত অগ্রগতি না হওয়ায় আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আপাতদৃষ্টিতে জটিল সমীকরণের মুখে পড়েছে।
এছাড়া নির্বাচনে দলটির আনুষ্ঠানিক মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার কৌশল এই জটিলতা আরও বাড়িয়েছে।
তবে দলটির নেতারা বলছেন, ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগেই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলের ব্যানারে নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ। এবার ১৪ দলের সঙ্গে আসন বণ্টন কীভাবে হবে, তা নিয়ে চলছে দফায় দফায় আলোচনা। আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে এখনো কিছুই পরিষ্কার নয়।
আরেকদিকে জাতীয় পার্টি জোটভুক্ত নির্বাচন করবে নাকি পৃথকভাবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্দ্রীর সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের আলোচনা থেকে জানা গেছে, শরিকরা গতবারের চেয়ে এবার বেশি আসন চায়, কিন্তু আওয়ামী লীগ দিতে চায় কম। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সঙ্গেও চলছে দেন-দরবার। যদিও জাতীয় পার্টি বলছে, তারা ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
এদিকে শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীর। এই প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন দলের মনোনয়ন-বঞ্চিত ২৬ সংসদ সদস্য (এমপি), সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয়ভাবে প্রভাশালী নেতারা।
আওযামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বলছেন, তারা মনে করেছিলেন নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, শরিক দলগুলোর ওপর নির্ভরতা কমাতে চান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা ও জোটনেতাদের নৌকা প্রতীকে ভোট করার প্রবণতায় শেখ হাসিনা অনীহা প্রকাশ করেছেন।
অন্য তিনবারের মতো এবার নৌকা প্রতীক না দিতে কঠোর অবস্থানে তিনি। তার অবস্থানে শরিক দলের প্রার্থীরা মধ্যে নিরাশার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে এখনও আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।
১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময় বলেছেন, নির্বাচনে দাঁড়ালে হেরে আসবে, এমন প্রার্থীকে আসন ছাড়তে চায় না আওয়ামী লীগ। গ্রহণযোগ্যতা আছে, নির্বাচনে জয়ী হবে—কেবল এমন প্রার্থীকেই আসন দিতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
এ বিষয়ে দ্বিমত আছে জোটের শরিকদের। ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইতিহাস কী বলে? আওয়ামী লীগ সেসব প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, তারা সবাই কি বিজয় লাভ করে?’
আসন বণ্টন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের চাহিদা আমরা বলেছি, গতবারের চাইতে বাড়িয়ে দিন। এখন পর্যন্ত পুরোটাই আলোচনার পর্যায়ে আছে। আমরা আশা করছি, ১৫ তারিখের ভেতরে এটা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।’
১৪ দলীয় জোটের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, গত কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শরিক দলের নেতাদের বৈঠকে শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ২৪টি আসন দাবি করা হয়।
জাতীয় পার্টি নিয়ে ধোঁয়াশা
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, ১৪ দলের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করতে চায় বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। যদিও জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দেশজুড়ে সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
তবে দলটি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কি না, তা নিয়ে খোদ সরকারি দলে রয়েছে সংশয়।
জাতীয় পার্টির একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চায় জোটে। একাদশ জাতীয় সংসদে ২২টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি এবার আসন চায় অন্তত ৪০টি। বিষয়টি নিয়ে দেন-দরবার চলছে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আমাদের তো বলেছে, তারা নির্বাচনে আছে, জোটে থাকতে চায়। তারা তো সরে যাবে বলেনি।’
তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টিকে বিশ্বাস করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে বলেও তিনি মনে করছেন।
অবশ্য এরপরও গত ১২ ডিসেম্বর রাতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা এক অনির্ধারিত বৈঠক করেছেন। সূত্রমতে, সেখানে জাতীয় পার্টির পক্ষে ৪০ আসন দাবি করা হয় জোটভুক্ত নির্বাচনের জন্য।
তবে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সেটা চাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ কারণে শেষ পর্যন্ত জোটসঙ্গীদের খুব বেশি আসনে ছাড় দেবে না বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ১৪ দলের শরিক ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলের হাইকমান্ড থেকে দ্রুতই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। সেজন্য যত ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার, আওয়ামী লীগ সেটাই করবে।
আপনার মতামত জানানঃ