শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিপক্ষের পদত্যাগ আহ্বানের দাবিতে আলোচনা প্রত্যাখ্যান করার পর তাদের আরও তিনজন সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশকে কঠোর হস্তে শাসন করার অভিযোগ আছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর শাসনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে গত এক বছরে ধারাবাহিক বিশাল সব প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে বিরোধী এই দলটি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির শত শত সিনিয়র নেতাকর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে গ্রেপ্তার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়েছে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। তার ছেলে ইসরাফিল খসরু বলেছেন, (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতের দিকে গুলশানে আমার এক আন্টির বাসা থেকে বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিএনপি আরও নিশ্চিত করেছে দলের মুখপাত্র জহির উদ্দিন স্বপন এবং জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক, দলটির ঢাকার একটি ইউনিটের প্রধান আমিনুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপির সর্বোচ্চ পদে থাকা অন্যতম নেতা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করার কয়েকদিন পর পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে।
২৮শে অক্টোবর বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেল দেয়া এবং তার ছেলে (তারেক রহমান) লন্ডনে নির্বাসনে থাকার পর থেকে দলের নেতৃত্বে সহায়তা করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিবিসি বলছে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতারের পর বাকী নেতাদের অনেকেই গ্রেফতারের আশংকায় আত্মগোপন করেছেন।
বিশেষ করে দলটি যখন তাদের ‘সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের’ কর্মসূচি পালন করছে তখন সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার বা আত্মগোপন নতুন করে দলটির জন্য কোন সংকট তৈরি করছে কি-না সেই প্রশ্নও উঠছে।
তবে দলটির নেতারা দাবি করছেন যে গ্রেফতার বা মামলায় সাজা দিয়ে অনেক নেতাকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরানো হলেও তাতে দলের অভ্যন্তরে কোন সংকট তৈরি হবে না। কারণ তারা মনে করেন দলটিতে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা আছে এবং কেউ গ্রেফতার হলে বিকল্প নেতারাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিবেন।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বিবিসি বাংলাকে বলছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘বিএনপির প্রার্থী হতে পারে এমন নেতাদেরই ‘টার্গেট করে আটক বা আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হচ্ছে’। কিন্তু দলের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা থাকায় এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা তাদের জন্য কঠিন কিছু হবে না বলেই মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন অবশ্য বলছেন যে, বিএনপির সংগঠিত হবার প্রচেষ্টায় নেতাদের গ্রেফতারের একটি প্রভাব থাকবেই। কিন্তু দলটি সেই সংকট মোকাবেলায় কী পদক্ষেপ নেয় সেটিও সামনের দিনগুলোতে দেখার বিষয় হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এখন ‘চূড়ান্ত আন্দোলনে’ আছে বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাসের মাঝামাঝি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলছেন আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এমন পরিস্থিতি হবে এবং বহু নেতাকে জেল-জুলুম মোকাবেলা করতে হবে এটি তাদের অনুমিতই ছিলো।
“এটি আমরা জানতাম। কারণ সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে সম্ভাব্য সব কিছুই করতে চাইবে, সেটিই স্বাভাবিক। দলের অভ্যন্তরে আমাদের সব পর্যায়ে এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন যাকে যে দায়িত্ব দিবেন তিনিই সেটি পালন করবেন,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিজ রহমান।
তিনি বলেন, “সংকট আসলে উত্তরণ হবে। দল চলবে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায়। তাই নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ার কিছু নেই। এগুলো আন্দোলনেরই অংশ”।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনি কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করার কোন আলোচনা দলের মধ্যে নেই। কারণ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীই দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন।
সহযোগী সংগঠন কিংবা জেলা – থানা পর্যায়েও একই পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে চাইছে দলটি। অর্থাৎ একজন আটক হলে সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পরবর্তী যিনি থাকবেন তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন।
আপনার মতামত জানানঃ