আজ সোমবার (৭ আগস্ট) মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বদলে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩’ নামে নতুন আইন আসবে। গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পরিবর্তন করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টের অনেক ধারা থাকবে না। পরিবর্তন ও সংশোধনও হবে।”
“শেখ হাসিনার সরকার ‘লিসেনিং গভর্নমেন্ট’ হিসেবে কাজ করছে। সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
মন্ত্রী আরো জানান, যেসব ধারার পরিবর্তন হবে তার মধ্যে বিশেষ করে মানহানির জন্য যে জেল সেটি থাকবে না।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার সমুন্নত রাখা এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিএসএ সংশোধন করা হবে।
“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাকস্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণীত হয়নি বা ব্যবহার করা হচ্ছে না। আইনটির অপব্যবহার রোধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলোর অংশ হিসেবে আইনে কিছু সংশোধন আনা হবে।”
বর্ণবাদের বিস্তার রোধ; সাম্প্রদায়িকতা; সন্ত্রাসী প্রোপাগান্ডা রোধ; এবং সোশ্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো রোধ করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ডিএসএ আইন প্রণীত হয়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রণীত এই আইনের অধীনে পুলিশ কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে আটক করতে পারে। আইনটি এর অপব্যবহারের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। গণমাধ্যম, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা এই আইনের বিরোধিতা করেছেন।
আইনটি বাতিল বা সংশোধনের দাবি তোলা হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সরকারকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান জানান।
“আমি উদ্বিগ্ন যে, বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, ভয় দেখানোর জন্য এবং অনলাইনে সমালোচকদের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।”
টিআইবি-এর বক্তব্য
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলে মন্ত্রিসভার নেওয়া সিদ্ধান্তকে সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালবাংলাদেশ-টিআইবি। একইসঙ্গে, নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে যেন একই রকম দমনমূলক ধারা না থাকে, তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার (৭ আগস্ট) আইনটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা আইন নীতিগতভাবে অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পরই একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায় টিআইবি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জায়গায় প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন যাতে স্বাধীন মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে তার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। এ ছাড়া এ আইন যেন গণমাধ্যমকে দমন করার হাতিয়ার না হয়ে ওঠে সে ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
অ্যামনেস্টির বক্তব্য
বাংলাদেশের নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তবে সংস্থাটি আশা প্রকাশ করেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে যেন ওই আইনের বিতর্কিত বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে আনা না হয় এবং আইনটি যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
সোমবার (৭ আগস্ট) মন্ত্রিসভা বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাদ দিয়ে বিষয়বস্তুতে বড় পরিবর্তন এনে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ঘোষণা আসার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক দপ্তর এক টুইটে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে যেন ওই আইনের দমনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে আনা না হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরও বলেছে, নতুন আইনটি পাস হওয়ার আগে সব অংশীদার যেন প্রস্তাবিত এই আইন খুঁটিয়ে দেখা এবং এটা নিয়ে মতামত প্রদানের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়। এর বিধানগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিএনপির বক্তব্য
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন আরও ভয়ংকর ও বিপজ্জনক হবে।
সোমবার (৭ আগস্ট) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের হাত দিয়ে ভালো কিছু হবে না। দেশি-বিদেশি চাপে তারা লোকদেখানো হিসেবে এটি করেছে। সাইবার নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়েও ভয়ংকর আর বিপজ্জনক হবে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন মনুষ্যত্বহীন আওয়ামী ফ্যাসিজমের কালো ছায়ার নিচে। নির্যাতনের নির্মমতার মুখে দাঁড়িয়ে আছে গণতন্ত্রকামী মানুষ। অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামী জনগণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।’
যা বললেন জি এম কাদের
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, আইনটি আরও আগেই বাতিল করা উচিত ছিল। সোমবার (৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ আইন প্রণয়ণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আশা করি এই আইন যেন মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী না হয়। সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার না হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করলে আমরা তা মেনে নেব না।’
এসডব্লিউএসএস/২২৩০
আপনার মতামত জানানঃ