র্যাবকে নিয়ে ডয়চে ভেলে এবং নেত্র নিউজে প্রকাশিত রিপোর্ট সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংকালে এ মন্তব্য করেছেন মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল।
একজন সাংবাদিক এ সময় তার কাছে প্রশ্ন করেন- সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এবং সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
তাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে র্যাব বিচারবহির্ভূত ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত। প্রথমবারের মতো দু’জন হুইসেলব্লোয়ার এই বাহিনীর ভিতরের তথ্য প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে উপরের নির্দেশ থাকতে পারে। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না? জবাবে প্যাটেল বলেন, এই আর্টিকেল এবং ভিডিওর বিষয়ে আমরা সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখব। আশা করি বাংলাদেশ সরকারও তা করবে।
যা উল্লেখ আছে
সেনা এবং পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত র্যাবকে নিয়ে কয়েক মাস ধরে ডয়চে ভেলের ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট এবং সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজ যৌথ অনুসন্ধান চালিয়েছে৷ প্রতিষ্ঠার দুই দশক পর এই প্রথম এই বাহিনীতে কাজ করা দুই সদস্য এই ‘ডেথ স্কোয়াড’ এর ভেতরের তথ্য জানালেন৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের ব়্যাবের বিভিন্ন ইউনিটের কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল৷ তাদের পরিচয় এবং নিয়োগের ইতিহাস নিশ্চিত করা হয়েছে৷ কিন্তু তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের চিহ্নিত করা যায়, এমন সকল তথ্য গোপন রাখা হচ্ছে৷
একজন হুইসেলব্লোয়ার জানিয়েছেন, ব়্যাব যদি জানতে পারে যে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাহলে তিনি যে বাহিনীতে কাজ করেছেন সেই বাহিনীই তাকে মেরে ফেলতে পারে৷
ডয়চে ভেলে তাদের স্বীকারোক্তির সত্যতা যাচাই করেছে এবং বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী এবং অন্যান্য সূত্র যেমন পুলিশ এবং পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন, বিভিন্ন মামলার তথ্যভাণ্ডার এবং একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অডিও রেকর্ড যাচাই করার মাধ্যমে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে৷
এই দুই তথ্যদাতার দেয়া প্রতিটি তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি৷ দুজনেই জানিয়েছেন কাগজপত্রে কোনো প্রমাণ যাতে না থাকে, সেজন্য গোপন এই অপারেশনগুলোর দায়িত্ব দেয়া হতো মৌখিকভাবে৷
আলাদাভাবে নেয়া সাক্ষাৎকারে মূল বিষয়গুলো নিয়ে দুজনেই একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন৷ তাদের সাক্ষ্য থেকে পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি চিত্র পাওয়া যায়৷ অপহরণ থেকে নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটনাগুলোকেও বলতে গেলে দায়মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়া হয়৷
ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক ইমেলে এই অভিযোগকে ‘‘কাল্পনিক, বানোয়াট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত,” আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ বলা হয়েছে, ‘‘এমন কোনো অভিযোগ পেলে মন্ত্রণালয় যথাযথভাবে একজন স্বাধীন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে৷ তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, অভিযোগ সত্য নয় বলে মনে হচ্ছে৷”
ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়া দুই ব্যক্তিই বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রাজনৈতিক স্বার্থে এই অভিজাত বাহিনীকে ব্যবহার করেন৷ অভিযোগ রয়েছে, সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ থেকে এসবের অনুমোদনও দেয়া হয়৷
লক্ষ্যবস্তু যদি রাজনৈতিক ব্যক্তি হয় তাহলে কেবল উচ্চপর্যায়ের সুস্পষ্ট অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতেই এটি বাস্তবায়ন করা হয়৷ সাক্ষাৎকার দেয়া এক ব্যক্তি বলেন, এসব ক্ষেত্রে ‘‘সিদ্ধান্ত সর্বনিম্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আসবে৷ বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই আদেশটা প্রদান করে থাকেন৷”
অন্য সাক্ষাৎকারদাতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কোনো নির্দেশ দিবেন বলে মনে হয় না৷”
তিনি বলছিলেন, আওয়ামী লীগের প্রধান এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা, যিনি ২০০৯ সাল থেকে দেশের ক্ষমতায় আছেন৷
একজন হুইসেলব্লোয়ার বলেন, যেসব টার্গেটকে ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা তারও উপরের কেউ, যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দেন”, তাদের বিষয়টি ‘‘প্রাধান্য” দিয়ে দেখা হয়৷
এই অভিযোগটি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারা যায়নি৷ তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব়্যাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং এর সর্বোচ্চ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করেন৷
ডয়চে ভেলে এবং নেত্র নিউজ এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং এসব অভিযোগকে ‘‘বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত‘‘ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ ডয়চে ভেলেকে ‘‘দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী প্রচার” না করার বিষয়ে সতর্কও করেছে মন্ত্রণালয়৷ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোনো উত্তর দেয়া হয়নি৷
‘‘ডেথ স্কোয়াড” এর ভেতরের তথ্য
চেইন অব কমান্ড বিষয়ে বিস্তারিত বলা ছাড়াও এই দুই তথ্যদাতা অভিজাত এই বাহিনীর ভেতরের অনেক তথ্য উন্মোচন করেছেন৷ কোনো টার্গেটকে যখন মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তখন বেশ কিছু পদক্ষেপ সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করা হয়৷
প্রথমে একটি স্থান নির্ধারণ করা হয়৷ লোকচক্ষুর আড়ালের একটি স্থান বেছে নেয়া হয়, যাতে কোনো সম্ভাব্য সাক্ষী না থাকে৷ ঢাকায় এমন এক জায়গা হচ্ছে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া দূষিত তুরাগ নদীর তীর৷ আরেকটি হচ্ছে কক্সবাজার এবং টেকনাফের মধ্যকার ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের কিনারা৷
এরপর, সাধারণত গভীর রাতে, যখন রাস্তা জনমানবশূন্য থাকে এবং দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায়, কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে টার্গেটকে আটকে চোখ বেঁধে একটি বেসামরিক গাড়িতে তুলে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়৷
একজন তথ্যদাতা জানান, ঘটনার শিকার কিছু ব্যক্তি জীবন ভিক্ষা চান, অন্যরা চুপ থাকেন৷ এরপর টার্গেটকে গুলি করে তার রক্তক্ষরণে মৃত্যু হওয়া অবধি অপেক্ষা করা হয়৷ যখন তাদের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়, তাদের চোখের কাপড় খুলে ফেলা হয়৷ কোনো চিহ্ন না রাখার জন্য চোখ বাঁধা হয় নরম কাপড় দিয়ে৷ এরপর তাদের হাতের বাঁধনও খুলে ফেলা হয় বলে জানান একজন তথ্যদাতা৷
এরপর দৃশ্যপট সাজানো হয়৷ কী গল্প বলা হবে, তার ওপর নির্ভর করে নিহতের শরীরে নানা প্রমাণ সাজিয়ে রাখা হয়৷ যদি গল্পটি দুই গ্যাং এর মধ্যে মারামারির হয়, তাহলে মাদক এবং ইয়াবা মৃতের সঙ্গে রাখা হয়৷ সন্দেহভাজন জিহাদী হলে তার শরীরের পাশে ধর্মীয় কাগজপত্র রেখে দেয়া হয়৷
এক হুইসেলব্লোয়ার জানান, উভয় ক্ষেত্রেই টার্গেটের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে দেয়া হয়৷ তিনি জানান, এইসব অস্ত্র অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারত থেকে পাচার করে আনা হয়৷ এরপর ফাঁকা গুলি করে বুলেটের খোসা মাটিতে ফেলে রাখা হয়৷
কিন্তু কিছু বিরল ক্ষেত্রে ব়্যাব একেবারেই নীরবে কাজ করে৷ ভিকটিমদের তুলে নিয়ে কোনো চিহ্ন রাখা হয় না৷ কখনও কখনও কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না৷ এইসব ঘটনাকে ‘‘গুম” বলে উল্লেখ করা হয়৷ বাংলাদেশজুড়ে এখনও শত শত মানুষ এভাবেই নিখোঁজ রয়েছেন৷
রক্তাক্ত ইতিহাস
এমন এক সময় এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আক্রমণ সামলে ওঠার চেষ্টা করছিল৷ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে তখন ওয়াশিংটন প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছিল৷
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বাহিনীতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী থেকে সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে অপরাধ এবং সন্ত্রাস দমনে নিযুক্ত করা হয়৷ এই বাহিনীতে ১৩ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছেন যাদের ইউনিফরম, মুখোশ এমনকি কালো সানগ্লাসও সরবরাহ করা হয়৷
ব়্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল যে উদ্দেশ্যে, সেটি তারা বেশ ভালোভাবেই করছিল৷ ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের প্রধান মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে খারাপ লোকদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে নির্মমভাবে দক্ষ সন্ত্রাসবিরোধী দল হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল এটি৷ বাংলাদেশ এর আগে কয়েক বছর সন্ত্রাসবাদের কারণে ভুগছিল৷”
ডয়চে ভেলেকে দেয়া লিখিত উত্তরে মার্কিন দূতাবাসের এক মুখপাত্র জানান, ‘‘সন্ত্রাস মোকাবিলায় যখন ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন তাদের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দেয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে, এটা কোনো গোপন তথ্য নয়৷”
তবে তিনি জানান, ‘‘মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক উদ্বেগের কারণে” ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এর অর্থায়ন বন্ধ করা হয়েছে৷ মানবাধিকার কর্মীদের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৭০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ব়্যাব৷
২০১৮ সালে বাংলাদেশ ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা করার পর হত্যার ঘটনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়৷ এক তথ্যদাতা জানান, শুরুতে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই ‘মাদক চোরাচালানকারীদের হত্যা করা হতো’৷
চূড়ান্ত দায়মুক্তি
বছরের পর বছর ধরে র্যাবের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও৷ র্যাব এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শত শত রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বেসামরিক ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে, যারা আর ফিরে আসেনি, জানান এসব ঘটনার দিকে নজর রাখা অ্যাক্টিভিস্টরা৷
এমন অধিকারকর্মীদের একজন নূর খান লিটন৷ তিনি জানান, ব়্যাব ‘‘আইন অমান্য করে এবং মানুষ হত্যা করে৷”
বিশিষ্ট এই মানবাধিকার কর্মী গত দুই দশক ধরে এই বাহিনীকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী শুরু থেকেই এই বাহিনী ‘‘এই মানসিকতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে, কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা হলে অনেক সময় লাগে এবং কখনও কখনও এরা জামিন পেয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ফিরে যায়৷”
বাংলাদেশের ধীরগতির এবং প্রায়ই দুর্নীতিগ্রস্ত আইনি ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে এই মন্তব্য করেন তিনি৷ এর পরিবর্তে ব়্যাব নিজের হাতে বিচারের ভার তুলে নেয়৷ এর আগেও এ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও অবশেষে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর ব়্যাব এবং এর সাত উচ্চপদস্থ বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করে মার্কিন রাজস্ব বিভাগ৷
‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ’ এর ওপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল৷ বলা হয় এটি, ‘‘আইনের শাসন এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুন্ন করার মাধ্যমে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকেও হুমকির সম্মুখীন করে৷”
কুগেলমানের মতে, এই পদক্ষেপটি ‘‘একটি বেশ বড় ব্যাপার” ছিল৷ তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাজ্য এমন পদক্ষেপ নেয়নি৷
শত শত মানুষ নিখোঁজ
ঢাকার শহরতলীর একটি বাসার ফুল ও গাছ আচ্ছাদিত ছাদে ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে ডয়চে ভেলে৷ প্লাস্টিক চেয়ারে সারি সারি করে বসা এই ব্যক্তিদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী, কেউ ছিলেন বয়স্ক পুরুষ, বেশ কয়েকজন শিশু৷ এদের অনেকেই আঁকড়ে ছিলেন ধূসর হয়ে যাওয়া ছবি, কারো স্বামী, কারো বাবা, কারো ছেলের৷ ছবির মানুষদের বেশিরভাগেরই এক দশকের বেশি সময় ধরে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ কাউকে কাউকে পরবর্তীতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে৷
নিহতদের অনেকেই বর্তমানের বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর স্থানীয় কর্মী৷ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে র্যাব এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থা তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল বলে জানান স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা৷
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন৷
আত্মীয়রা একে একে তাদের ঘটনা বলতে উঠে দাঁড়ান৷ মাঝেমধ্যেই তারা তাদের স্বজনের নিখোঁজ হওয়ার কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ এক নারীর ভাষ্যমতে, তাদের নিখোঁজ প্রিয়জনদের সাথে কী হয়েছে সেটিও না জানতে পারাটা ‘অসহ্য যন্ত্রণার’৷
একজন মেয়ে বাবাকে তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়ে কেঁদে ফেলে৷ অন্য আরেকজন মেয়ে নিজের একান্ত স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে৷ সে শুধু চায় তার বাবা তাকে স্কুলে নিয়ে যান৷
এক পর্যায়ে, এই দলের মুখপাত্র এবং বৈঠকের আয়োজক সানজিদা ইসলাম নিচের একটি সরু গলিতে একটি দোকানের বাইরে বসে থাকা বেশ কয়েকজন ব্যক্তির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ তিনি জানান, এরা সবসময় ওখানেই উপস্থিত থাকেন৷ সেদিনই কিছুক্ষণ পর তার বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ইউনিফরম পরা এক ব্যক্তিকে ইসলামের গাড়ির চালকের কাছে গিয়ে ওপরের তলায় আসা দর্শনার্থীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে৷
এসডব্লিউএসএস/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ