ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের গুয়াহাটির এক মন্দিরে নারীকে বলিদানের ঘটনায় দেশটির পুলিশ অন্তত পাঁচ সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গুয়াহাটির ওই মন্দিরে প্রায় চার বছর আগে মুণ্ডহীন লাশ উদ্ধারের পর বিস্মিত হয়েছিলেন পুলিশের কর্মকর্তারা। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বুধবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঝাড়ফুঁক, মন্ত্রতন্ত্র, জলপড়া বা তান্ত্রিকদের দাপট চলছে দিব্যি৷ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে এই কুসংস্কারের বলি হচ্ছে অনেক জীবন৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে কামাখ্যা মন্দিরে এক নারীর মুণ্ডহীন লাশ উদ্ধারের পর বিস্মিত হয়েছিলেন পুলিশের কর্মকর্তারা। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বারাহ বলেছেন, গ্রেপ্তাররা প্রত্যেকেই ওই নারীকে হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে প্রধান সন্দেহভাজন ৫২ বছর বয়সী প্রদীপ পাঠক। তিনি ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার আত্মার শান্তির জন্য বলিদানের পরিকল্পনা করেছিলেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে কামাখ্যা মন্দিরের অম্বুবাচি মেলায় গিয়েছিলেন ৬৪ বছর বয়সী ওই নারী। সেখানে অভিযুক্তরা ছুরি দিয়ে তার শিরশ্ছেদ করে। এরপর গত জানুয়ারিতে তার মরদেহ শনাক্ত করে পুলিশ। তদন্তে আসে নতুন মোড়। পুলিশ কয়েকজন অপরাধীকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়। তবে এখনো মামলার অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন।
ভারতে চুলের ছাঁট পছন্দ না হওয়ায় ১৬ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোর। মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল) দিনগত রাতে মহারাষ্ট্রের ভায়ন্দরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, ভাইয়ের সঙ্গে স্থানীয় একটি সেলুনে গিয়েছিল ১৩ বছর বয়সী শত্রুঘ্ন পাঠক। কিন্তু সেলুন থেকে ফেরার পর চুলের নতুন ছাঁট দেখে মনমরা হয়ে পড়ে সে। এ সময় বাড়ির সবাই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। রাতে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লে শৌচাগারের জানালা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে শত্রুঘ্ন।
পরিবারের সদস্যরা জানায়, সেলুনে শত্রুঘ্নের চুল অতিরিক্ত ছোট করে কেটে দেওয়া হয়। সেই ছাঁট একেবারে পছন্দ হয়নি কিশোরের। বাড়ি ফিরে আয়নায় নিজের মুখ দেখে কান্নাকাটি শুরু করে সে। এ সময় বাবা, মা এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা তাকে অনেক বোঝান। কিন্তু এতকিছু করেও তাকে আত্মহত্যা থেকে নিবৃত্ত করা যায়নি।
ভায়ন্দরের একটি আবাসিক ভবনের ১৬ তলায় থাকত ওই কিশোর। পুলিশ ওই ভবনের নিচ থেকে শত্রুঘ্নের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা।
উল্লেখ্য, ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) দেশটিতে ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মানব বলির ১০৩টি মামলা দায়ের করেছে। সাধারণত দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য আচারিক এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। তবে দেশটির উপজাতীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ধরনের মানব বলিদানের ঘটনা বেশি দেখা যায়; যেখানে জাদুবিদ্যার প্রতি মানুষের প্রবল বিশ্বাস রয়েছে।
গত বছর দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে ছয় বছরের এক শিশুকে হত্যার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। নির্মাণ শ্রমিক দুই অভিযুক্ত পুলিশকে বলেছে, তারা ধন-সম্পদ লাভের আশায় হিন্দু দেবতা শিবকে সন্তুষ্ট করতে শিশুটিকে হত্যা করেছে।
এই নরবলি প্রথা শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই ছিল৷ তবে অতীতে৷ প্রাচীন গ্রিসে দেবতা জিউসের সামনে শিশুবলি দেবার প্রমাণ পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা৷ খরস্রোতা নদীর ওপর বাঁধ ও সেতু নির্মাণের আগে কিংবা ঘরবাড়ি তৈরির আগে অশুভশক্তিকে তুষ্ট করতে নরবলি দেওয়ার প্রথা ছিল জাপানে৷
মিশরে ফারাওদের কবরের সঙ্গে বেশ কিছু ক্রীতদাসকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হতো৷ দক্ষিণ এশিয়াতেও বড় বড় রাজা-মহারাজা বা জমিদারেরা বিশেষ কামনা পূরণের জন্য নরবলি দিত৷ নরমুণ্ড মালিনী, জিবে রক্তধারা, হাতে খাঁড়া নিয়ে দেবি কালীর বা দেবি চামুন্ডার বিগ্রহে অথবা বেদীতে নরবলি ছিল মর্যাদার প্রতীক৷
কালক্রমে এ প্রথাই মোষ বলিতে বা পাঁঠা বলিতে নেমে আসে৷ হিন্দু পুরাণেও অশ্বমেধ যজ্ঞের মতো নরমেধ যজ্ঞের উল্লেখ আছে৷ কিন্তু এই একবিংশ শতকেও নরবলি?
যুক্তিবাদীরা মনে করেন, এর বড় কারণ অশিক্ষা আর দারিদ্র৷ অন্ধবিশ্বাসে চালিত হয়ে এরা ভাগ্যের ওপর সব কিছু ছেড়ে দেয়৷ আর সেই সুযোগটাই নেয় তান্ত্রিকরা৷ নানা রকমের ঝাড়ফুঁক, কবজ-তাবিজ, পশুবলি, এমনকি নরবলি কিংবা শিশুবলি দিয়ে ভাগ্য ফেরাবার অথবা গুপ্তধন পাবার পরামর্শ দিয়ে থাকে তারা৷ এটা এখনও চলছে৷ পুলিশ প্রশাসন এটা বন্ধ করতে তেমন গা করছে না৷
এসডব্লিউএসএস/১১২০
আপনার মতামত জানানঃ