সম্প্রতি ভারতে মুসলিমদের বেশ কিছু মসজিদ ও স্থাপনা নতুন করে হিন্দুত্ববাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর প্রদেশের জ্ঞানবাপি মসজিদ, দিল্লির কুতুব মিনার, মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদ, আগ্রার তাজমহল ও আজমিরের বিখ্যাত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর দরগাকে নিজেদের ধর্মীয় পীঠস্থান দাবি করেছে হিন্দুত্ববাদীরা।
রাম জন্মভূমি ও মন্দিরের অস্তিত্ব দাবি করে গত শতকের নব্বইয়ের দশকে পাঁচশ বছরের পুরনো অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। যার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শুরু দেশভাগের আগে থেকেই। সে মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের মোহর লাগার পর এটি আরো স্পষ্ট হয় যে, এ সময়ে ভারতের বিচার বিভাগও মসজিদ ভাঙার সহায়ক ভিন্ন কিছু নয়।
‘প্রাচীন মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল’- এই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে একের পর এক ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলো ভাঙ্গার পটভূমি তৈরি করছে বিজেপি।
হিন্দুত্ববাদীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোকে বিতর্কিত করতে হিন্দুত্ববাদী আদালতে একের পর এক মামলা করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হল মসজিদের স্থানগুলোকে প্রথমে বিতর্কিত করা, যেন পরে হিন্দুত্ববাদী আইন আদালতের মাধ্যমে সে জায়গাগুলো দখল নিতে পারে। আর ঘটছেও এমনটাই। তারা জানে, আজ না হোক কাল হিন্দুত্ববাদী আদালত তাদের দাবির পক্ষেই রায় দিবে; যেমনটা হয়েছে বাবরী মসজিদের ক্ষেত্রে।
ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পর থেকে একে একে প্রায় সকল ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর ব্যাপারেই আদালতে তারা একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাই কোর্ট চত্বরে রয়েছে একটি মসজিদ। এবার সেটাতেই আপত্তি জানাল দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে তিনমাসের মধ্যে মসজিদটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতে মুসলিমদের সমস্ত নিদর্শন মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৭ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টও ওই মসজিদটি ভেঙে ফেলার আদেশ দেয়।
পরে আদেশটির বিরুদ্ধে আবেদন করে ওয়াকফ মসজিদ হাইকোর্ট ও উত্তর প্রদেশ সুন্নী কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ড। সোমবার আবেদনটি খারিজ করে দিল সুপ্রীম কোর্ট।
বিচারপতি এম আর শাহ ও সিটি রাভিকুমারের দ্বৈত বেঞ্চ এসময় উত্তরপ্রদেশের সরকারকে মসজিদটি পুনঃস্থাপিত করতে জায়গা বরাদ্দের নির্দেশও দিয়েছে বলে জানা গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি মসজিদটি বাতিলকৃত লিজ সম্পত্তির অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় এখানে কোনো স্থাপত্য না রাখাই আইনগত দিক থেকে বৈধ।
আরো বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মসজিদটি না সরানো হলে এলাহাবাদ হাইকোর্ট চাইলে তা সরিয়ে বা গুড়িয়ে দিতেও পারবে।
আবেদনের পক্ষে শুনানীতে আইনজীবি কপিল সিব্বাল আদালতকে বলেন, ১৯৫০ সালে নির্মিত এই ঐতিহাসিক মসজিদটি মুহুর্তের মধ্যেই সরানো সম্ভব নয়। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে একটি জনস্বার্থে একটি মামলা করা হয়।
অপরদিকে, প্রতিপক্ষের আইনজীব এটিকে একটি প্রতারনামুলক বিষয় বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘এর আগেও দু’বার এটি নতুন করে তৈরির আবেদন করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
কিন্ত মসজিদের নাম করে সাধারন মানুষ এখানে তাদের বাড়ি ঘর গড়ে তুলছে। কোনো একটি জায়গায় নামাজ পড়লেই তা মসজিদ হয়ে যায় না। সুপ্রীম কোর্ট বা হাইকোর্টের বারান্দায় নামাজ পড়ে থাকেন অনেকেই, তাহলে সেটিকে নিশ্চয় আমরা মসজিদ বলব না।
এর আগে এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায়, আদালত চত্বরের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এর ভিতরে আবার মসজিদ তৈরি করা সম্ভব নয়। এসময় নিজস্ব পার্কিংয়ের জায়গার অভাবের কথাও উল্লেখ করে হাইকোর্ট।
এসডব্লিউএসএস/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ