ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার সময়কালে প্রযুক্তির বড় রকমের উন্নতি ঘটেছিল। সে সময়টায় দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে আরো অনেক ব্যাপারই যুক্ত হয়েছিল। তার মধ্যে নারীদের নিজেদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রবণতা বা অভ্যাস খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
সেই সময়ে নারীদের দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে রূপচর্চা করার বিষয়টি ছিল অন্যতম মুখ্য বিষয়। সেসময় কিছু ক্যমিক্যাল মিশ্রিত কসমেটিকস এর প্রচলন শুরু হয়েছিল যা শরিরের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর ছিল। নারীরা সেসময় মেকআপ থেকে শুরু করে, শরীর নিয়ন্ত্রণ পোশাক, মুখ সাদা করার জন্য বিষাক্ত ক্রিম ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল, কারণ ছিল তারা নিজেদেরকে মানুষের সামনে সুন্দর দেখাতে চাইতেন।
নিজেদের সুন্দর দেখানোর জন্য বিষাক্ত ক্রিম, শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন পোশাক পরিধানের পাশাপাশি তারা আরো অদ্ভুত কিছু পন্থা অবলম্বন করতেন। তেমন কয়েকটি রূপচর্চার অদ্ভুত পদ্ধতি তুলে ধরা হলো।
যক্ষ্মা সৌন্দর্য বাড়ায়
যক্ষ্মা রোগ হওয়ার ফলে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের ফ্যাকাশে ত্বক, লাল ঠোঁট এবং কোমর পাতলা হয়ে যেত। আর এগুলোই সেসময়ের নারীরা নিজেদের শরীরের জন্য চাইতেন। তারা এটি এত পছন্দ করেছিল যে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যক্ষ্মা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। বহু মানুষ মারা গিয়েছিল এর ফলে। তবে যারা এই যক্ষ্মা থেকে সুস্থ হয়েছিল তারা এই রোগটিকে রোমান্টিক করতে থাকে।
কারণ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের স্বচ্ছ ত্বক, রেশমি চুল এবং ঝকঝকে চোখ ছিল। আর তাই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত নারীরা তাদের ঠোঁট লাল করে এবং গালে রং করে একই চেহারা অনুকরণ করতে শুরু করে। তারা মেকআপও ব্যবহার করেছিল যাতে তাদের ত্বককে হালকা দেখায়। যক্ষ্মা হওয়া সেসময়ের নারীদের জন্য একধরনের ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছিল। যেহেতু তারা মনে করতো যক্ষ্মা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে দেয়।
চোখে লেবু ও কমলার রস
ভিক্টোরিয়ান যুগের নারীরা তাদের চোখে লেবু ও কমলার রস ব্যবহার করতো। কারণ তারা বিশ্বাস করতো এগুলোর রস চোখে দিলে চোখ আরো উজ্জ্বল ও পরিষ্কার হয়। এগুলো ব্যবহার তাদের জন্য কিন্তু আনন্দদায়ক ছিল না, লেবু ও কমলার রস এসিডিক হওয়ায় তাদের চোখ প্রচন্ডরকম জ্বালা করতো এবং চলখ লাল হয়ে যেত। তবুও তারা এগুলো চোখে দেওয়ার ব্যাপারে অটল ছিলেন। প্রচুর লেবু ও কমলার ব্যবহারের ফলে তাদের চোখের কর্নিয়ার ক্ষতি হতো। ফলে অনেই অন্ধ হয়ে যেত।
আর্সেনিকের ব্যবহার
ভিক্টোরিয়ান যুগে ফ্যাকাশে ত্বক ছিলসৌন্দর্যের প্রথম ও প্রধান প্রতিক। আর তাই তারা পানিতে আর্সেনিক মিশিয়ে গোসল করতো যাতে শরীরের ত্বক কিছুটা ফ্যাকাশে হয়। গোসল ছাড়াও তারা আর্সেনিককে বিভিন্ন ধরণের ত্বকের সমস্যা যেমন দাগ এবং পিম্পলের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহার করতো (এর জন্য তাদের ত্বক প্রচন্ড জ্বালা করতো)। আর্সেনিক একটি বিষাক্ত পদার্থ এ ব্যাপারে জানারা পরেও নারীরা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ক্রমাগত তা ব্যবহার করে গেছেন।
দীর্ঘদিন আর্সেনিক ব্যবহারের ফলে সেসকল নারীদের শরীরে ঘা হওয়া শুরু হয়। ঘা হওয়ার পাশাপাশি তাদের শরীরে রক্তশূন্যতা, প্রচন্ড মাথাব্যথা এবং বমি হওয়ার শুরু হয়। অনেকে আবার এটি পান ও করতো ফলে তাদের থাইরয়েড গ্রন্থিও ফুলে যায়। শুধু আর্সেনিক খাওয়াই বিপজ্জনক ছিল না, যে কোনো পোশাকে আর্সেনিকের উপস্থিতি এটি পরিধানকারী এবং যারা এটি পরিষ্কার ও সেলাই করতো তাদের জীবন ও ঝুঁকিতে ফেলে দিতো। কিছু বছর পরে, আর্সেনিকের ব্যবহার এতটাই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে যে সরকার এটির ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করে।
টয়লেট মাস্ক ব্যবহার
টয়লেট মাস্ক ছিল একটি নমনীয় ফেস রাবার যা ভিক্টোরিয়ান নারীরা তাদের ত্বককে সুন্দর ও স্লিম করতে ব্যবহার করত। এটি প্রথম ১৮৭৫ সালে ম্যাডাম হেলেন রোই দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল। রাসায়নিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এটি ক্ষতিকারক নয় এমন মতামত দেয়া হয়েছিল। সাধারণত এটি রাতের বেলা মুখে লাগিয়ে ঘুমাতো, ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। এর কারণ এটি সাধারণত মুখের উপর একটি দস্তানার মতো করে পরা হত।
ওজন কমাতে ফিতাকৃমি
ভিক্টোরিয়ান যুগের, নারীরা দ্রুত ওজন কমানোর ব্যাপারে সচেতন ছিল। যাতে নতুন কোনো ফ্যাশন চালু হলে তা যেন তাদের শরীরের সঙ্গে মানিয়ে যায়। সেসময় অনেক বিজ্ঞাপনে প্রচার করা হতো, যদি স্লিম হতে চাও তাহলে কৃমি খাও! (এই বিজ্ঞাপন করার কারণ ছিল কোম্পানিগুলোর কৃমির ঔষধগুলো যেন রাতারাতি বিক্রি হয়ে যায়।) আর তাই অনেক নারী নিজেদের কৃমি নিজেরাই খেতেন! ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। অনেকেই এটা খেতে গিয়ে বমি করে দিতেন এবং অসুস্থ ও হয়ে পড়তেন। একবার তাদের অবস্থাটা কল্পনা করে দেখুন।
এসডব্লিউএসএস/১৮১৭
আপনার মতামত জানানঃ