জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। সরকার বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট চলছে। সরকার বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ। ব্যাংকে ডলার সংকট। সরকার বলছে, ইউক্রন যুদ্ধ। মেনে নিলাম। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে যে সংকট চলছে, সেটা তো ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঘটেনি। সরকার ঘটিয়েছে। কেউ ১৬ বছর আগে। কেউ ১৬ বছর পর। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই দেশে নির্বাচনের উপর আস্থাহীন সাধারণ মানুষ।
মূলত পাকিস্তান আমল থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। যাহা বাহান্ন তাহা তিপ্পান্ন। পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটাধিকার। আইয়ুব খান প্রথমে সেনাশাসন জারি করে জনগণের সব অধিকার কেড়ে নেন। এরপর তিনি মৌলিক গণতন্ত্রের নামে দেশে এক আজব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে জনগণের ভোটাধিকার ছিল না। বিডি মেম্বাররা প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নির্বাচিত করতেন। এরপর মানুষ আন্দোলন করে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তানি শাসকচক্র সেই ভোটের রায় বানচাল করায় পাকিস্তান রাষ্ট্রটাই ভেঙে যায়। বহু ত্যাগ ও প্রাণের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও ভোটাধিকার নিয়ে আমাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
এরশাদের আমলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলে ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে। বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ অন্যদের নিয়ে আন্দোলন করেছে। এখন বিএনপি ও অন্যান্য দল একই দাবিতে আন্দোলন করছে। এর শেষ কোথায়? যেমন জনগণের নেই ভোটাধিকার, তেমন রাজনৈতিক দলগুলোর থাকে না রাজনৈতিক অধিকার।
এই মুহূর্তে গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। সরকার অনুমতিও দেয়। স্বাভাবিকভাবে মানুষ আশা করেছিল, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশটি হয়ে যাবে। সমাবেশের আগে ও পরে সেখানকার জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু বিএনপি সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকে বসলেন। সংশ্লিষ্টরা বললেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও মহাসড়কে নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, অতুল, ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচলের প্রতিবাদে দুদিন পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাসমালিক ও শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডাকলে সরকারের বা আওয়ামী লীগের কী করার আছে। সত্যিই কি তাদের কিছু করণীয় নেই? মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
উল্টো এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, বিএনপির গণসমাবেশের আগে যে ধর্মঘট করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং সাধারণ শ্রমিক-মালিকদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। পুরোপুরি সরকারের নির্দেশে অতি উৎসাহী পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে পরিবহন ধর্মঘট করেছে।
যেকোনো কমর্সূচিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গণপরিবহন বন্ধ থাকলে কমর্সূচি আহ্বানকারী রাজনৈতিক দল যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার চেয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয় বেশি। এতে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন কিছুটা হলেও কমে।
সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন ধরে রাখতে ও জনদুর্ভোগ এড়াতে সমাবেশের আগে গণপরিবহন চালু রাখা যেতে পারে। আগামীকাল শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে একটি গোয়ন্দা সংস্থার তৈরি করা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থাটির মতে, গণসমাবেশের সময় পরিবহন বন্ধের কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হয়েছে, যাতে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে কয়েকটি স্থানে শুরু থেকেই বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ফরিদপুর বিভাগে গণসমাবেশ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরিদপুরে যেখানে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে, কোমরপুরের সেই আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠের ধারণক্ষমতা ২০-২২ হাজার। এ সমাবেশে ২৫ থেকে ৩০ হাজার লোকের সমাগম হতে পারে। বিভিন্ন জেলার বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মনোমালিন্য থাকায় তারা পৃথক পৃথকভাবে সমাবেশে যোগ দেবেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পযর্বেক্ষণে বলা হয়েছে, বিএনপি গণসমাবেশ করে জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে পুনরায় শক্তি ফিরে পেয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সম্প্রতি গণসমাবেশে আশানুরূপ জনসমাগম হওয়ায় বিএনপি মনে করছে, তাদের জনসমর্থন আগের চেয়ে বাড়ছে এবং সাধারণ জনগণ তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে।
গণপরিবহন বন্ধসহ বিভিন্নভাবে বাধার কারণে বিএনপির বিগত পাঁচটি বিভাগীয় গণসমাবেশে দু-এক দিন আগেই নেতা–কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।
এটা উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামীতে ঢাকা মহানগরীতেও এ ধরনের বড় কোনো সমাবেশের আয়োজন করলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীরা দু-এক দিন আগে থেকে সমাবেশস্থলে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে ঢাকা মহানগরীতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ জনদুর্ভোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২১২০
আপনার মতামত জানানঃ