জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের নামে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ৩৮ জনের তালিকা দিয়েছে র্যাব। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার স্ক্রাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এই তালিকা দেন। নিরুদ্দেশ থাকা প্রায় ৫০ জনের মধ্যে ৩৮ জনের নামসহ পরিচয় জানায় র্যাব।
আল মঈন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি তরুণের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি, যারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তারা গত দুই বছরে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। সবশেষ দেড় মাস আগে কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিরুদ্দেশ হন।’
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘কোন জেলা থেকে কতজন নিরুদ্দেশ হয়েছেন, সেই তালিকা আমাদের কাছে আছে। তাদের কারও কারও পরিবার জানে, সন্তান বিদেশে গেছেন, তারা মাঝেমধ্যে অর্থ পাঠান। কিন্তু আসলে তারা জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়ে ঘর ছেড়েছেন।’
জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে পাঁচজনকে গত রোববার ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় র্যাব। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতেই র্যাব আজ সংবাদ সম্মেলন করে।
র্যাব বলছে, গতকাল গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সবাই নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে যুক্ত। নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানান আল মঈন।
তালিকায় থাকা ৩৮ নাম
মো. দিদার, তাহিয়াত চৌধুরী, আহাদ, মশিউর রহমান, সাখাওয়াত হোসাইন, আরিফুর রহমান, মো. নঈম হোসেন, শামীম মিয়া, আল আমিন ফকির, আমিনুল ইসলাম, মো. নাজমুল আলম নাহিদ, আল আমিন, শেখ আহমদ মামুন, মো. আস সামি রহমান, সাদিক, হাসান সাঈদ, বায়েজিদ, জুয়েল মুসল্লী, ইমরান রহমান শিথিল, সাইফুল ইসলাম তুহিন, আল আমিন, ইমরান, শিব্বির আহমদ, হাবিবুর রহমান, মুহাম্মদ আবু জাফর, যুবায়ের, নিহাদ আব্দুল্লাহ, মাহমুদ ডাকয়া, আমির হোসেন, নাহিদ, সালেহ আহমাদ, রাব্বী আবদুস সালাম, ইয়াছিন বেপারী, মো. মিরাজ সিকদার, ওবায়দুল্লাহ সাকিব, জহিরুল ইসলাম, আবু হুরায়রা, আবুল বাশার মৃধা।
বাংলাদেশে কি আবার জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে?
সম্প্রতি সন্দেহভাজন কয়েকজন জঙ্গি আটক এবং বেশ কিছু যুবকের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবরে এই অপশক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে অনেকের ধারণা৷ কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন নিকট ভবিষ্যতে জঙ্গিদের আবার সহিংস রূপে দেখা যেতে পারে৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাফিকুল ইসলামের বক্তব্যেও এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ গত মাসে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন হলে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগামী (সংসদ) নির্বাচনের সময় জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এবং এর কিছু আলামতও দেখা গেছে৷
বেশ কয়েক বছর ধরে জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করছে এমন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো সহিংস তৎপরতার জন্য নির্দিষ্ট সময় ও পরিস্থিতি বেছে নেয়, যা নির্ভর করে কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক প্রবণতার উপর৷ অন্য সময়ে তারা প্রচারণা ও কর্মী সংগ্রহের মাধ্যমে সংগঠনের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে ব্যস্ত থাকে৷ এই পর্যায়ে নিবেদিত কিছু কর্মী বাছাই করে তাদের মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ‘জিহাদের’ জন্য প্রস্তুত করা হয়৷
জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)-র অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম বলেন, “একদিকে পুরাতন জঙ্গি সংগঠন, যেমন জেএমবি, আন্সার-আল ইসলাম ও হুজিবি সংগঠিত হচ্ছে, অন্যদিকে এসব সংগঠনের কিছু প্রবীণ নেতা জেল থেকে বেরিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছোট ছোট দল গঠন করে কাজ করছে৷ অনেক ক্ষেত্রে তারা নতুন নাম দিয়ে গোপনে যুবকদের সক্রিয় করছে।”
অতীতের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় মূলত এই অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷ কেননা, সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর সেই সুযোগটাই তারা কাজে লাগাতে চায়৷
তবে দেশে যদি শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে আফগানিস্থান, সিরিয়া ও কাশ্মীরে বড় ধরনের কর্মকাণ্ড না ঘটে, তাহলে বাংলাদেশে জঙ্গিদের উত্থান ঘটার আশঙ্কা নেই বলে এই কর্মকর্তার ধারণা৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ