ঢাকা জেলা (উত্তর) যুব মহিলা লীগের সভাপতিসহ জেলা ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ৭ নেত্রী ও এক নেত্রীর স্বামীর বিরুদ্ধে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বঙ্গবন্ধু পক্ষাঘাত ও পেশাজীবী পরিষদের (বিপিপিপি) নামে ঘর ও নলকূপ দেওয়ার কথা বলে দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে তাদের এই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ঢাকা জেলা পিবিআইএর পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম খান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
অভিযুক্ত নেতা-কর্মীরা হলেন, ঢাকা জেলা (উত্তর) যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাসলিমা শেখ লিমা, ঢাকা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলেয়া আক্তার আলো, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রণতি পালমা ও তাঁর স্বামী দিলীপ পালমা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ঝুমা খান, সদস্য সুমী আক্তার, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শামীমা আফরোজ মুন্নী এবং আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য সালমা আক্তার।
সূত্রে জানা গেছে, বিপিপিপির সাভার শাখার সভাপতি ও সাভার উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীমা বাশার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিপিপিপি নামে ঘর ও নলকূপ দেওয়ার কথা বলে দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
গত বছর (২০২১) ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারকে। পুলিশ সুপারের পক্ষে পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম খান অভিযোগের তদন্ত করে গত জুন মাসে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপিপিপির সাভার শাখায় বিভিন্ন পদে কর্মরত অবস্থায় দুস্থ, দরিদ্র ও পক্ষাঘাতগ্রস্তদের মাঝে জমিসহ ঘর ও নলকূপ দেওয়ার কথা বলে তাসলিমা শেখ লিমা ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা, আলেয়া আক্তার ৪০ লাখ, প্রণতি পালমা ৬ লাখ, তার স্বামী দিলীপ পালমা ৯৪ লাখ, ঝুমা খান ১ কোটি ৬৫ লাখ, সুমী আক্তার ১০ লাখ, শামীমা আফরোজ মুন্নী ১৫ লাখ এবং সালমা আক্তার ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রতারণার মাধ্যমে জমি ও ঘরের জন্য ৩০ হাজার আর নলকূপের জন্য ১০ হাজার টাকা করে আদায় করেন। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসেবে তাঁরা প্রথমে জমিসহ ঘর ও নলকূপ দেওয়ার কথা প্রচার করেন।
এরপর বিভিন্ন এলাকার সুবিধা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের কয়েকজনের বাড়িতে ইট ও বালু পাঠিয়ে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করেন। এর পরপরই স্বল্পমূল্যে জমিসহ ঘর ও নলকূপ পাওয়ার জন্য লোকজন তাদের টাকা দিতে শুরু করেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর তাঁরা কোনো ব্যক্তিকে জমি, ঘর ও নলকূপ দেননি।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত তাসলিমা শেখ লিমা বলেন, ‘আদালতে পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে আমার নাম থাকলেও টাকা নেওয়ার কোনো প্রমাণ পিবিআইয়ের কাছে নেই।’
তাসলিমা শেখ লিমার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা জেলার দায়িত্বে থাকা শারমিন সুলতানা বলেন, ‘তদন্ত সংস্থা বা ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে তাসলিমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রকাশ্য ও গোপন তদন্ত করে এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৫৭
আপনার মতামত জানানঃ