রাজপথে একতরফা মার খাওয়ার পর বিএনপির কোন কোন নেতা এখন প্রতিরোধের কথা বলছেন। কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির কর্মীরা লাঠির মাথায় পতাকা বেঁধে মিছিল সমাবেশ বা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
যার ফলে বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একতরফা হামলা চালানোর অভিযোগ করার পর এখন বিরোধীদল বিএনপিকেও সংঘর্ষে জড়াতে দেখা গেছে। যেমন একটি মিছিল থেকে বিএনপির কর্মীরা গত সোমবার আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের দলের কর্মীদের কেউ কেউ আত্নরক্ষার্থে এভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। তবে এটি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত নয় বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, আমাদের এরকম কোন সিদ্ধান্তই নাই। এটা আমাদের কর্মীরা অনেকেই নিজস্ব আত্নরক্ষার জন্য যেটাতে পতাকা বাঁধে, সেটা নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, “মার খেতে তারা এখন পতাকা নিয়ে মিছিল করছে। পতাকা নিয়ে মিটিংয়ে যাচ্ছে। অন্য কোনো সমস্যাতো তারা তৈরি করে নাই।”
বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ হচ্ছে, পতাকা নিয়ে মিছিলেও ক্ষমতাসীনরা আক্রমণ করছে। ঢাকার হাজারীবাগের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, গত সোমবার হাজারীবাগে আমাদের নেতাকর্মীরা সমাবেশের জন্য তিনবার জায়গা পরিবর্তন করেছে। সেখানেও আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে। আমরা (বিএনপি) কোনভাবেই কোনো সংঘাত চাই না। সরকার সংঘাত করছে এবং বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
তবে কোন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দলের কর্মীরা যখন লাঠির মাথায় পতাকা বেঁধে অংশ নেন, তখন সংঘাতের সুযোগ থাকে কিনা বা অন্য রকম কোন বার্তা দেয় কিনা-এসব প্রশ্ন আমলে নিতে রাজি নয় বিএনপি নেতৃত্ব।
তাদের অনেকের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার অবস্থানে থেকে এখন তারা এই সরকারের পতনের আন্দোলনে মাঠে নেমেছেন।
ফলে এই আন্দোলনে এবার তাদের জয়ী হতে হবে, তা নাহলে তাদের জন্য আসবে চরম বিপর্যয়। এমন চিন্তা নিয়ে তারা এগুচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতামত
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি সিনিয়র একাধিক নেতা বলেছেন, সারাদেশে তাদের দলের নেতাকর্মীরা এবার কিছুটা আত্নবিশ্বাস ফিরে পেয়ে মাঠে নেমেছেন। ফলে নির্বাচনের আগের বছরই দলটির নেতৃত্ব রাজপথে প্রতিরোধ করার একটা শক্তি অর্জন করতে চাইছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মারমুখী আচরণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, দুই দলের অবস্থানের কারণে নির্বাচনের অনেক আগেই রাজনীতিতে নানা আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
“নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকতেই বা অনেক আগে থেকেই চারিদিকে যে সংঘর্ষ হচ্ছে, এটা অপ্রত্যাশিত। এটা দুই দলের জন্যই ঝুঁকি তৈরি করছে। আমি বলবো, এটা কোন ভাল দিকে এগুবে না।”
এদিকে আওয়ামী লীগ টানা তেরো বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর চলতি বছরে বড় মাত্রায় তেলের দাম বৃদ্ধি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।।আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও স্বীকার করেন যে, অনেক মানুষ সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ।
ফলে সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষ বিএনপি যাতে আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিকভাবে কোন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে না পারে-এমন চিন্তা থেকে সরকার এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে কর্মসূচির ব্যাপারে আরও কঠোর হবে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এই বিরোধ আরও বাড়বে।
তার যুক্তি হলো, আওয়ামী লীগ মোটামুটি ধরে নিয়েছে যে বিএনপি মুখে যাই বলুক, তারা নির্বাচন করবে এবং নির্বাচন করার জন্য তারা সিরিয়াস। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সভা-সমাবেশগুলোতে প্রচুর মানুষের উপস্থিতির বিষয়টিও এক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রাখছে বলেও তিনি মনে করেন।
“যেখানেই তারা (বিএনপি) অল্প সময়ের ঘোষণায় মিটিং করে, সেখানে কিন্তু অনেক লোকজন হয়। এতে আওয়ামী লীগ কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়ে গেছে।”
“সব দিক বিচার করলে মনে হয়, এই সমস্যা বা বিরোধ আগামীতে আরও বাড়বে।”
আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের চাপে রয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্বে জ্বালানি সঙ্কটের a দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে চাপে পড়ছে দেশের ভেতরে।
এমন পটভূমিতে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের অনেকে মনে করেন, সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে রাজপথে মানুষের সমর্থন বাড়তে পারে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা এমন ধারনাও করছেন যে বিএনপি ঢাকায় প্রতিদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে এবং তাতে লোকসমাগমও বাড়বে। তবে সেই সুযোগ তারা দিতে চান না।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩৫
আপনার মতামত জানানঃ