পূজার সময় নিরাপত্তা জোরদার, সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
একই সঙ্গে দুর্গাপূজায় অষ্টমী, নবমী ও দশমী এই তিনদিন সরকারি ছুটি ঘোষণাসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতিকালে মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরায় নির্মীয়মাণ দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, হত্যা, জরবদখল, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, জোর করে ধর্মান্তরিত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করে তারা।
দেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্মূলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের একটি অংশ। তারা বলছে, প্রশাসন এই আইনের অপব্যবহার করে হিন্দু নির্যাতনের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, গ্রামগঞ্জে ধর্মীয় বক্তারা কীভাবে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করছেন। তখন কী আমাদের ধর্ম অবমাননা হয় না? তখন প্রশাসন কোথায় থাকে, তাদের কেন আইনের আওতায় আনা হয় না? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু কি হিন্দুদের, ৫৭ ধারা শুধু কি আমাদের জন্য?
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে বলেন, সারাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে দুর্গাপূজা। মন্দিরে প্রতিমা বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু পূজা ও নির্বাচন এই দুটি বিষয় নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, গ্রামগঞ্জে ধর্মীয় বক্তারা কীভাবে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করছেন। তখন কী আমাদের ধর্ম অবমাননা হয় না? তখন প্রশাসন কোথায় থাকে, তাদের কেন আইনের আওতায় আনা হয় না?
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ১৫ অক্টোবরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলা, মন্দিরে অগ্নিসংযোগ হয়েছে তার ক্ষত এখনো শুকায়নি। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের নিরাপত্তা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় ভাবতে শুরু করেছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৫৭ ধারা হিন্দু নির্যাতন ও হিন্দু সম্প্রদায়কে দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা যদি সবার জন্য সমান না হয়, তাহলে অবিলম্বে এই আইন বাতিল করতে হবে।
প্রত্যেক স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্দিরে সরকারি খরচে সিসি ক্যামেরার বসানো, পূজার ১০ দিন আগে থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা যদি সবার জন্য সমান না হয়, তাহলে এই আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর সম্প্রতি আবার সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেককে এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় বলেন, ‘দুর্গাপূজার আর এক মাসও বাকি নেই। ইতিমধ্যে সারা দেশে নির্মীয়মাণ প্রতিমা ভাঙচুর করা হচ্ছে। তাহলে আমরা যাব কোথায়?’
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার দাস বলেন, এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে নিষ্পেষিত, এখন ডিজিটালভাবেও নির্যাতিত ও নিপীড়িত। ৫৭ নামে যে ডিজিটাল আইন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এর বলি হচ্ছে হিন্দুরা। কারণে-অকারণে কীভাবে হিন্দুদের কণ্ঠ নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ রাখা যায়, সেই অভিপ্রায়ে ৫৭ ধারাকে অপব্যবহার করে নির্যাতনের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০২
আপনার মতামত জানানঃ