২০১৩ সালের মে মাসে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতাকর্মী তাণ্ডব চালায়। এসব ঘটনায় ঢাকাসহ ৭ জেলায় মোট ৮৩টি মামলা দায়ের করা হয়। ৮৩টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলায় ২০১৪ সালে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আর রাজধানীতে করা ৫৩টি মামলার মধ্যে বাকি ৪৯টি মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। চারটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল। চারটি মামলার চার্জশিট দেওয়ার পর ঢিমে গতিতে বিচারকাজ চলছে, যেগুলোতে অভিযুক্তের তালিকায় উল্লেখযোগ্য কেউ নেই। বাকিগুলোর তদন্ত কবে শেষ করে চার্জশিট দাখিল করা যাবে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো উত্তর নেই।
ঘটনার পরে যে ৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের প্রায় সবাই জামিনে মুক্ত। অনেকে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, কয়েকজন টেলিভিশনে টক শোতেও অংশ নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের একধরনের সমঝোতা স্থাপিত হয়েছে। এর প্রমাণ কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস সনদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর মর্যাদা দিয়ে স্বীকৃতি প্রদান।
সম্প্রতি মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে যে ব্যাপক সংশোধন করা হয়েছে, এটাকেও হেফাজতের সাথে সরকারের সমঝোতার নিদর্শন মনে করেন অনেকে।
অনেকে অভিযোগ করেন, হেফাজতের দাবি মেনে সুপ্রীম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। এছাড়া হেফাজত নানা রকম আর্থিক সুবিধা নিয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
তবে সম্প্রতি জানা যায় যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেতে হেফাজতের বিরুদ্ধে ঘুমিয়ে থাকা সাত বছরের পুরনো মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। এতদিন এসব মামলা নিয়ে পুলিশের আগ্রহ না থাকলেও এখন দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দিতে চায় সংস্থাটি। সম্প্রতি সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার তাগাদা দিয়েছেন।
হেফাজত–সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করছেন, এতদিন হেফাজতের একটা অংশের সঙ্গে সরকারের এক ধরনের বোঝাপড়া ছিল। তাই মামলাগুলো চাপা পড়েছিল। এরই মধ্যে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এরপর ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে হেফাজতকে চাপে রাখতে মামলাগুলো সামনে আনা হচ্ছে।
এদিকে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর তিন মাস পর তাঁকে হত্যার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার হেফাজতের ৩৬ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা হয়। এই মামলাকেও ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ এবং ‘চাপে ফেলার কৌশল’ বলে দাবি করছেন হেফাজতের নেতারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের পাল্টা ‘মঞ্চ’ হিসেবে সামনে আসে হেফাজতে ইসলাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তাদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে মাঠে নামে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক চট্টগ্রামের হাটহাজারীকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসূচি শেষে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক। তাঁরা দিনভর বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
নারকীয় তাণ্ডবের পর হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশের করা ৫ মামলা ছাড়াও আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থরা করেন বাকী ৭ মামলা। ঐ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় বর্তমান আমীর (তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারী) বাবু নগরীকে। এছাড়াও সরকার উৎখাতের হুমকি দেয়ায় বাবুনগরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়।
কিন্তু উত্তাপ থিতিয়ে গেলেই সরকার হেফাজতের সাথে আপোষ-রফায় যায়। সমঝোতা করা হয় হেফাজতের সাথে। সেই সমঝোতার অংশ হিসেবে মুক্তি দেয়া হয় বাবু নগরীকে। এরপর হেফাজতের প্রয়াত আমীর আল্লামা শফীর সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১০৩০
আপনার মতামত জানানঃ