বাধার সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে সংকুচিত করা হচ্ছে জানিয়েছেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে ১২টি ঘটনায় ১ জন সাংবাদিকের মরদেহ, ১ জন নারী সাংবাদিকের ঝুলন্ত মরদেহ, ২ জন সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি, ৫ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত করা ও হয়রানি করা হয়েছে।
এছাড়া জুলাই মাসে দেশে ৩৫৪টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৫৯টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৬টি এবং ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে দুটি।
এই সময়ে দুই প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরী ধর্ষণ ও তিনজন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এছাড়া নির্বাচনী ও রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৭টি ঘটনায় শিশুসহ মারা গেছেন পাঁচজন এবং আহত হয়েছেন ২৬৬ জন। পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন একজন এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
রোববার (৩১ জুলাই) সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে তুলে ধরা চলতি বছরের ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এমএসএফ এ প্রতিবেদন তৈরি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই ২০২২ মাসে দেশে ৩৫৪টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৫৯ টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৬ টি, ধর্ষণ ও হত্যা ২ টি। এর মধ্যে ৩ জন ধর্ষণ ও ২ জন প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ৫৯ জনের মধ্যে ১৬ জন শিশু, ২৬ জন কিশোরী রয়েছে, অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ জন শিশু ও ৭ জন কিশোরী। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ২ জনই শিশু।
এ ছাড়াও ২২টি ধর্ষণ চেষ্টা, ২৮টি যৌন হয়রানি ও ৪৪টি শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজন শিশু, ২৮ জন কিশোরী ও ৩৯ জন নারীসহ মোট ৬৮ জন আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে দুইজন প্রতিবন্ধী নারীও রয়েছে।
জুলাই মাসে আগের মাসের তুলনায় ৩২টি বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে ১০ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৮৮ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ২৪ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছে। অপহরণের শিকার হয়েছে ২ জন কিশোরী ও ২ জন নারী, অপরদিকে ৩ জন শিশু ৩ জন কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকার দলীয় ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, নির্বাচন ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহিংসতা, হানাহানি হতাহতের ঘটনাসহ নাগরিক জীবনে উৎকণ্ঠা বেড়েছে। অপরদিকে ক্ষমতাসীন দলের নিজেদের মধ্যকার সংঘাত-হিংস্রতা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিকার। ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে।
নির্বাচনী ও রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৭টি ঘটনায় জুলাই মাসে একটি শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ২৬৬ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকার দলীয় ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, নির্বাচন ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহিংসতা, হানাহানি হতাহতের ঘটনাসহ নাগরিক জীবনে উৎকণ্ঠা বেড়েছে। অপরদিকে ক্ষমতাসীন দলের নিজেদের মধ্যকার সংঘাত-হিংস্রতা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিকার। ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে।
জুলাই মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ৬টি মামলায় বিএনপির ৩ জন নেতাকর্মী ও এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি নিয়ে কথিত মানহানিকর কটূক্তি করার অপরাধে এসব মামলা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে মারধরের হুমকিসহ তাদের বাসা বাড়ি এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, দুষ্কৃতকারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমকর্মীদের বাধার সৃষ্টি করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া জুলাই মাসে উদ্বেগজনকভাবে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে। এ মাসে অন্তত ১৬টি গণপিটুনির ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৯ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। চুরি, ডাকাতি এবং পরকীয়া সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে।
এমএসএফ জানায়, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা লক্ষণীয় নয়। এ কারণে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলছে। সমাজে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের নজরদারি জোরদার করা প্রয়োজন। দেশে ধর্ষণ, শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্ব ও নজরদারি আরও জোরদার করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন ছাড়াও চলতি বছরের জুলাই মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন একজন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন একজন এবং আহত হয়েছেন র্যাবের দুই সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কারা হেফাজতে মৃত্যু হয় দুজনের, যা গত মাসের তুলনায় কমলেও উদ্বেগজনক। এছাড়াও কারাগারে নির্যাতন ও বিনা অপরাধে কারাগারে আটকের অভিযোগ উঠেছে।
এমএসএফ জানায়, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের যেভাবে হয়রানি ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্ক্ষিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করার সামিল। তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অপমাণ, নিপীড়ন, হত্যার হুমকি, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা ও দুষ্কৃতকারীর পাশাপাশি মাদক কারবারিরা এসব কাজে জড়িত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ