ইসরায়েলের জোট সরকার দেশ চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এক ঘোষণায় সোমবার সরকার জানায়, আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্ট (নেসেট) ভেঙে দেবে তারা। আর এমনটা হলে, তিন বছরের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচনে যাবে ইসরায়েল। এখন যে প্রশ্ন দেশটা জুড়ে, তা হলো- অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ ইসরায়েলে কেন কোনো সরকার থিতু হতে পারছে না? তার মানে কি নেতানিয়াহু সরকার ফের ক্ষমতায় আসছে?
ইসরায়েলের বর্তমান সরকার ডানপন্থি, মধ্যপন্থি এবং ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দলসহ আটটি দলের মিশ্রণ। মাত্র এক বছর আগে সরকার গঠন করে তারা। প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট তার জোটসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিডের সঙ্গে মিলে দুই বছরের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ২০২১ সালের জুনে জোট গঠন করেছিলেন। অবসান ঘটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার রেকর্ডের।
তবে বছর না কাটতেই জোটে দেখা দিয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। কয়েক সপ্তাহের জল্পনার অবসান ঘটে সোমবার। জানিয়ে দেয়, দেশ আর চালাবে না নাফতালি বেনেট সরকার। ক্ষমতাসীন এই জোটকে একত্রিত রেখেছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিরোধিতা। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না।
কী নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব?
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, পশ্চিম তীর দখল এবং ধর্ম ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে বিবাদে জড়িয়ে জোটের অনেক শীর্ষ নেতা সরকার ত্যাগ করেছেন। সেই থেকেই পতনের শুরু।
বেনেটের ডানপন্থি ইয়ামিনা পার্টির সদস্য ইডিট সিলম্যান সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে গত এপ্রিলে ইসরায়েলের ১২০ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় জোটটি। এতে আইন পাস করানোর ক্ষমতা হারায় বেনেট সরকার। এই অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে কতদিন টিকবে এই সরকার।
এদিকে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভে ইসরায়েলি পুলিশের হামলা, পশ্চিম তীরে অভিযানের নামে গুলি করে ফিলিস্তিনি হত্যার মতো ঘটনায় আরব বিশ্বে এক ধরনের হুমকিতে আছে ইসরায়েল। যদিও জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।
দল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ইয়ামিনা পার্টির আরেক সদস্য নির অরবাচ গত মাসেই সরকার পতনের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেনেটকে।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে দুই সপ্তাহ আসে। সেদিন অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের জন্য ইসরায়েলি নাগরিক আইন সংস্কারের একটি বিল পার্লামেন্টে আটকে যায়।
সেটলার আইনের বিষয়ে সাধারণত ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যায় ইসরায়েলের পার্লামেন্টে। গত পাঁচ দশকে বহুবার এটির সংস্কার হয়েছে। সরকার ও বিরোধীদের ক্রমবর্ধমান তিক্ততার কারণে সেদিন তা ব্যর্থ হয়।
কী ঘটতে যাচ্ছে?
পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করতে মঙ্গলবার বৈঠক করবে দেশটির সরকার।
যদি পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া হয় তবে জোট গঠনের চুক্তির শর্ত হিসেবে নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাপিড।
কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, অন্য নির্বাচনে না গিয়ে একটি বিকল্প সরকার গঠনের সুযোগ রয়েছে ইসরায়েলের। কারণ ডানপন্থি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিবেচনায় ইসরায়েলের সরকার ও বিরোধীদের দূরত্ব ডানপন্থি দলগুলোকে পার্লামেন্টে চাপের মধ্যে রাখবে।
এ ছাড়া অনেক ইসরায়েলি নির্বাচন নিয়ে ক্লান্ত। বছর ঘুরতে না ঘুরতে আরেকটি নির্বাচনে তাদের উৎসাহী না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
যাই হোক, যদি দেশটি নতুন সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায়, তবে তা পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে হবে। ২৫ অক্টোবরের সম্ভাব্য তারিখ ইতোমধ্যেই আলোচনায় আছে।
নেতানিয়াহু কি ফিরবেন?
নেতানিয়াহু আগেই জানিয়েছিলেন, দায়িত্বে ফিরবেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মনে হয় বাতাস বদলে গেছে। আমি এটা অনুভব করতে পারছি।’
নেতানিয়াহু শিবির এখন পার্লামেন্টের স্বতন্ত্র সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন দলকে গোছানোর চেষ্টা করছে।
জনমত জরিপের পূর্বাভাস বলছে, নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থি লিকুদ আবারও বৃহত্তম একক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে। তবে নতুন সরকার গঠনের জন্য তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে পারবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
জনমত জরিপ পূর্বাভাস দিয়েছে যে নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থি লিকুদ আবারও বৃহত্তম একক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে। তবে নতুন সরকার গঠনের জন্য তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে পারবেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এসডব্লিউ/এসএস/
আপনার মতামত জানানঃ