রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ও একে কেন্দ্র করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার দরুন জ্বালানির দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রে। আর গ্যাসের এমন লাগামহীন দাম বৃদ্ধির জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে’ দুষলেন মার্কিন তেল ও গ্যাস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান টিম স্টুয়ার্ট।
শনিবার (১৮ জুন) ‘ক্যাভুটো লাইভ’ নামক এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি, যেখানে বাইডেন প্রশাসনের পরিকল্পনার ব্যর্থতা একটি জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এটি নেতৃত্বের এক বিশাল ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
গত শনিবার (১১ জুন) যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি গ্যালন গ্যাসোলিনের দাম ছাড়ায় ৫ ডলার। তবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা কমে ৪.৯৯ ডলারে এসে ঠেকেছে। তারপরেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এই দাম অনেক বেশি বলেই উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলমান সংঘাত ও অবরোধের প্রভাবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হারও বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিগত চার দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে মুদ্রাস্ফীতি।
আর এসবের প্রভাব মোকাবেলায় সুদহার বাড়িয়েছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ। গেল বুধবার (১৫ জুন) যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর কথা জানায় সংস্থাটি। ১৯৯৪ সালের পর এই প্রথম সুদহার এতটা বাড়ানো হয়েছে দেশটিতে।
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জন্য তেল ও গ্যাস শিল্প কর্তৃপক্ষকে দোষ দিয়ে লাভ হবে না বলে জানান টিম স্টুয়ার্ট। তিনি বলেন, “বুধবার তারা (বাইডেন প্রশাসন) দাম বৃদ্ধির জন্য তেল ও গ্যাস শিল্পের ওপর অভিযোগ এনেছে; আমরা নাকি সমাধানে যথেষ্ট করছি না। অথচ আমরা এখন আমাদের পরিশোধন ক্ষমতার ৯৫ শতাংশ ব্যবহার করছি।”
এদিকে, জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ‘জরুরি ক্ষমতা’ ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তবে, এই পদক্ষেপ হোয়াইট হাউস প্রশাসনের বিগত ১৮ মাসে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোকে বদলে দেবে না বলে উল্লেখ করেন স্টুয়ার্ট।
তিনি বলেন, এই সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে বিশেষ কথোপকথনের সময় উত্পাদন এবং সরবরাহ বাড়াতে জরুরি ক্ষমতা আহ্বানের হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এখানে বিড়ম্বনার বিষয় হল, এর মাধ্যমে কী গত ১৮ মাসে নেওয়া তাদের নীতিগত সিদ্ধান্তগুলোকে তারা বদলাতে পারবেন? এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য যে, যদি তারা এটি করেন তাহলে আমরা সেই পথেই এগোবো।
লন্ডনে বিক্ষোভ
জ্বালানি ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্কট যা দেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হাজার হাজার লোক লন্ডনের রাস্তায় নেমেছে। প্রতিবাদকারীরা পোর্টল্যান্ড প্লেসের আশেপাশে জড়ো হয়েছিল এবং সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার এবং সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছিল।
সেখান থেকে জনতা মিছিল করে পার্লামেন্ট স্কয়ারের দিকে, যেখানে বক্তারা জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা বিতর্কিত পুলিশ এবং অপরাধ বিলের সমালোচনা করেছেন যা ভবিষ্যতে এই ধরনের বিক্ষোভকে সীমিত করতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। জনসমাগমের মধ্যে ব্যানার দেখা যায়, ‘যুদ্ধ পরিহার করুন, কল্যাণ নয়’ এবং ‘ঘরে ঘরে জ্বালানির সঙ্কটের অবসান ঘটাও’।
আরও স্লোগান ছিল, ‘বোমা না বানিয়ে সেবা করুন’, ‘রাগ করবেন না, সক্রিয় হোন’ এবং ‘অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দাও’। বিক্ষোভ ওয়েস্টমিনস্টারের দিকে যাওয়ার সময় ভিড়ের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের শিস, উল্লাস এবং হাততালি শোনা যায়। টিইউসি প্রতিবাদটি সংগঠিত করেছে, ইউনিয়নের দ্বারা পরিচালিত গবেষণার পর পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, শ্রমিকরা ২০০৮ সাল থেকে প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড হারিয়েছে কারণ বেতন মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলেনি।
বিক্ষোভে বেন রবিনসন (২৫) যিনি দক্ষিণ লন্ডনের ব্রিক্সটনে একটি হাউজিং দাতব্য সংস্থার জন্য কাজ করেন, তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের অফিসে অনেকেই সাহায্যের জন্য আসছেন, যারা নিজেরা না খেয়ে বাচ্চাদের জন্য খাবার এবং ঘর গরম করার জন্য জ্বালানি চাইছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য এটি একেবারেই বেমানান।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৭২৫
আপনার মতামত জানানঃ