বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করলেও বিশ্বের কয়েকটি দেশে ‘মাঙ্কিপক্স’ নামের বিরল একটি রোগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ বেশ কিছু দেশে কয়েক ডজনের বেশি মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত করেছে দেশগুলোর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
চলতি মাসের শুরু থেকে এ সংক্রমণ বাড়ছে। এই রোগ আফ্রিকার কিছু অংশে উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। খবর এএফপির।
সর্বশেষ কানাডায় ১২ জনের অধিক মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। এর আগে ৪০ জনের অধিক এই রোগী শনাক্ত হওয়ার দাবি করেছিল ইউরোপের দেশ স্পেন ও পর্তুগাল।
৬ মে থেকে ৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন যুক্তরাজ্যে। আর গত বুধবার প্রথম একজন মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়ার দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে। কানাডা থেকে ফিরে আসার পর দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ম্যাসাচুসেটসের এক ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস ধরা পড়ে।
জ্বর, গায়ে ব্যথা, আকারে বড় বসন্তের মতো গায়ে গুটি গজিয়ে ওঠাকে আপাতত মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মাঙ্কিপক্সের একটি রূপ এতটাই ভয়ংকর যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ তাতে মারাও যেতে পারেন। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যান।
এ রোগে প্রাণহানির সংখ্যা খুবই কম। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশে হাজার হাজার মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকায় সংক্রমণের ঘটনা এটি প্রথম।
নতুন এই প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের দেশগুলোর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে বলে গত মঙ্গলবার জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সম্প্রতি ইতালি ও পর্তুগালেও এই রোগ শনাক্ত হয়েছে।
সুসান হপকিনস, যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির চিকিৎসা পরামর্শক মহামারি বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ মঙ্গলবার ডব্লিউএইচওর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের সংক্রমণ ছড়ানো দেশগুলোয় মাঙ্কিপক্সের ছড়ানোর বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হবে। এর প্রার্দুভাব, ঝুঁকি ও বিস্তারের বিষয়টিতেও নজর দিতে হবে।’
আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া থেকে ফেরা এক ব্যক্তি যুক্তরাজ্যে প্রথম সংক্রমিত হয়েছেন। পরে তার কাছ থেকে এটি আরও ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি (ইউকেএইচএসএ)।
সংস্থাটির প্রধান চিকিৎসা পরামর্শক সুসান হপকিনস বলেন, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সংক্রমণসংক্রান্ত প্রতিবেদনের ফলে মাঙ্কিপক্সের কমিউনিটি সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ থেকে এটি আরও ছড়ানোর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এই রোগ সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি ছড়াচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে।
সংস্থাটির সহকারী মহাপরিচালক সোসে ফল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষের মধ্যে আমরা এই রোগের সংক্রমণ দেখছি। এই নতুন তথ্যের বিষয়টি আমাদের আরও ভালোভাবে তদন্ত করতে হবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে স্থানীয় সংক্রমণের বিষয়টিও ভালোভাবে বুঝতে হবে।’
যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা বলেন, মাঙ্কিপক্সকে আগে যৌনবাহিত রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি) বলছে, যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে বেশির ভাগ মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
কানাডার কুইবেক প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, তারা মাঙ্কিপক্সের অন্তত ১৩টি সন্দেহভাজন ঘটনা তদন্ত করছে। যৌন সংক্রমিত ও রক্তবাহিত সংক্রমণের কয়েকটি ঘটনা জানার পর কানাডার পাবলিক হেলথ এজেন্সি এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩০০
আপনার মতামত জানানঃ