নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মূল কাজ হচ্ছে দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা। এই ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে তাদের কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারদের নামের তালিকা নেয়া হয়। এবারও নেয়া হয়েছে। তবে ২০১৭ সালের সঙ্গে তুলনা করলে এবার ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ কমেছে। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলো এবার রাষ্ট্রপতির সংলাপ এবং অনুসন্ধান কমিটিতে নাম দেওয়ার প্রক্রিয়া বর্জন করেছে। বর্তমানে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ভোট হচ্ছে দলীয় প্রতীকে। অর্থাৎ এখন আর দলনিরপেক্ষ নির্বাচন খুব একটা হচ্ছে না। তাই ইসির অস্তিত্ব শুধু নামসর্বস্ব বলেই মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো।
প্রসঙ্গত, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৩৯টি। এবার সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১০টি করে নাম চেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। বিএনপিসহ ১৫টি দল নাম দেয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, তাদের জোট ১৪ দলের শরিকেরা সবাই নাম দিয়েছে। এর বাইরে সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে এমন দলের মধ্যে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ অনুসন্ধান কমিটিতে নাম দিয়েছে। মোট ২৪টি দল নাম জমা দিয়েছে। অর্থাৎ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ ইসি গঠনে অংশীদার হয়েছে।
অনুসন্ধান কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তারা জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো ১৩৬ জনের নাম দিয়েছে। এর বাইরে পেশাজীবীদের কাছ থেকে ৪০ জনের, ব্যক্তিগতভাবে ৩৪ জনের এবং বিভিন্ন ই–মেইলের মাধ্যমে ৯৯ জনের নাম এসেছে। সব মিলিয়ে মোট ৩০৯ জনের নাম পেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি।
নতুন ইসির অধীনে নির্বাচন করবে না বিএনপি
গতকাল সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলতে চাই না। এ কারণে চাই না যে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচন করবে না।
তিনি বলেন, আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। একমাত্র নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। যখন নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সেদিনই বাংলার জনগণ ভোট দিতে পারবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির চোরাপথে ক্ষমতায় আসার অভ্যাস নেই। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে। আর আজকের প্রধানমন্ত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জনগণের ভোটচুরি করে। এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো মায়া-দয়া নেই। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, আপনারা আর কোনোদিন ভোট দিতে পারবেন না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হবে, সেদিনই বাংলার জনগণ ভোট দিতে পারবে। ইনশাল্লাহ বিএনপি সেদিন সরকার গঠন করবে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।
নতুন নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সরকারের পছন্দের লোক। তারা সবাই সরকারের অনুগত, সুবিধাভোগী ও তোষামোদকারী। এদের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না তারা।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে তার দলের কোনো আগ্রহ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের কাছে এটি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো কমিশন কাজ করতে পারবে না। এটা জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে।
আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, সরকাররকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে আমরাসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।
নবগঠিত ইসি আ’লীগ সমর্থিত আমলা নির্ভর: জাপা
নব গঠিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) আওয়ামী লীগ সমর্থিত আমলা নির্ভর হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) নতুন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়েও সন্দেহ আছে।
গত রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বনানী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। জাপা মহাসচিব বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে আজ দলীয়ভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি।
আমাদের প্রতিক্রিয়া হলো, যে নির্বাচন কমিশন করা হয়েছে সেটি আওয়ামী লীগ সমর্থিত একটি আমলা নির্ভর কমিশন। এ কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের আগামী কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে যে তারা নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে করতে পারছে কিনা। তখনই বোঝা যাবে এই কমিশনের নিরপেক্ষতা কতটুকু।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাপা নির্বাচনে যাবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে যাব কিনা সেটির জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনই বিষয় নয়। নির্বাচনে যাব কিনা সেটির জন্য আরও দুই বছর বাকি। জাতীয় পার্টি এমনিতে একটি নির্বাচনমুখী দল। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেব। অগ্রিম বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩০৫
আপনার মতামত জানানঃ