সাহারা মরুভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বালির স্তুপ। এতোটাই বড় যে, এখানকার বালি দিয়ে গোটা পৃথিবীকে ৮ ইঞ্চি পুরু করে ঢেকে ফেলা যায়! তবে প্রায় দশ হাজার বছর আগে সাহারা অঞ্চল ছিলো সবুজ, উর্বর আর জনবসতিপূর্ণ! বর্তমানের পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম এই স্থান, কয়েক কোটি বছর আগেও ছিলো টেথিস সাগর! ছিল ভয়ংকর সব প্রাণী।
শুনতে অবাক লাগলেও, আজকের সাহারা মরুভূমিই ছিল পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম স্থান; ডাঙায় যেমন ছিল ডাইনোসর, তেমনই জলে ছিল বিশাল সব প্রাণী। বর্তমান সময় এসে এমন ধারণাই দিলেন বিজ্ঞানীরা।
প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর আগের পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম জায়গার সন্ধান করেছেন তারা। আন্দাজ করা যায় কোন জায়গা? অবশ্য এই বর্ণনার সঙ্গে তার আজকের রূপের কোনো মিল নেই। কথা হচ্ছে সাহারা মরুভূমির সম্পর্কে।
শুধু আফ্রিকা নয়, গোটা পৃথিবীর সবথেকে বড়ো মরুভূমি আজও ভয়ংকরই। কিন্তু প্রাচীন সময় এর রূপটা খানিক আলাদা ছিল। আজকের মতো শুখা, বালিময় মৃত উপত্যকা নয়। রীতিমতো জঙ্গল, জলাশয়, নদী ছিল। সেইসঙ্গে ছিল বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। তাদের অনেকেই খুব শান্তশিষ্ট ছিল না। এমন কথাই বলছেন এই বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।
ডেট্রয়েট মার্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ নিজার ইব্রাহিমও ছিলেন এই দলে। সাহারা মরুভূমির এমন প্রাচীন অবস্থার ছবির কথাই উঠে এসেছে তাদের গবেষণায়। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ইতিহাস, ভূতাত্ত্বিক সব দিক থেকেই যাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সবদিক বিবেচনা করেই বিজ্ঞানীরা তখনকার সাহারাকে ‘পৃথিবীর ভয়ংকরতম স্থান’ বলেছেন।
সাহারার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগেও জীবাশ্ম ও প্রয়োজনীয় নিদর্শন পাওয়া গেছে। এবার মরক্কোর দক্ষিণ-পূর্ব অংশ থেকেও পাওয়া গেছে প্রাচীন মেরুদণ্ডী প্রাণীদের জীবাশ্ম। সেখান থেকেই পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। উঠে আসছে এর ভয়ংকর রূপ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, মরক্কো ও আলজেরিয়ার সীমান্ত এবং সাহারা মরুভূমির প্রান্তে ছিল ডাইনোসরের আতুরঘর। ১৯৯৬ সালে এখান থেকে প্রচুর জীবাশ্ম উদ্ধার করা হয়। এরপর নাম দেওয়া হয় ‘কেম কেম বেডস’। সে সময় সাহারা মরুভূমি শুষ্ক ছিল না। নদী, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া ও প্রচুর জলজ প্রাণি ছিল।
জীবাশ্ম থেকে জানা যায়, তিন ধরনের বড় মাংসাশি ডাইনোসর এখানে বাস করত। কারক্যারোডন্টসরাস ডাইনোসরের উচ্চতা ছিল ৪০ ফুটেরও বেশি। ডেল্টাড্রমিয়াস নামক বড় র্যাপটরের পেছনের পা লম্বা এবং সরু ছিল। এদের পাশাপাশি কুমিরের মত দেখতে হিংস্র প্রাণি ও উড়ন্ত সরীসৃপ ছিল।
আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন বছর আগে সাহারার এই অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াত ডাইনোসররা! শুধু তারাই নয়; টেরোসরাসের মতো বড়ো বড়ো পাখি, বিশাল হিংস্র কুমিররাও ঘিরে থাকত তল্লাট। ডাঙা ছাড়াও জলে ছিল বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, জলজ প্রাণী। অনেকেরই আকার ছিল বিশাল।
এখানে প্রচুর মাছও ছিল। ডাইনোসরের একাংশের খাদ্য ছিল মাছ। সে সময় এখানে বিশাল আকারের মাছ পাওয়া যেত। যেমন- সিলাকান্ত, লাঙফিস। এছাড়া এখানে এক ধরনের মাছ ছিল সে সময়। যার দাঁত ছিল ছুরিতে প্যাচানো কাঁটাতারের মত।
এমনকি থাকত অঙ্কোপ্রিসটিসের মতো প্রাচীন শার্ক। সব মিলিয়ে সাহারা মরুভূমির প্রাচীন দশাও যে খুব একটা সুবিধের ছিল না, তা বলাই যায়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ