মরুভূমিতে কী কী ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পারে? উত্তরটা যাই হোক না কেন, মোটামুটি নিঃসন্দেহেই বলা চলে, সে তালিকায় প্রথম দশটির মধ্যেও তুষারপাত কিংবা ঝড়ো বৃষ্টি নেই। কিন্তু গ্লোবাল ওয়ার্মিং যে ইতোমধ্যে চিরাচরিত সব নিয়মকানুন বদলে দিতে শুরু করেছে।
তাই হয়তো গত ৪২ বছরে এ নিয়ে ৫ বার সাহার মরুভূমিতে তুষারপাতের ঘটনা ঘটেছে। প্রথমবার ১৯৭৯ সালে বরফের চাদরে ঢেকেছিল সাহারা। এরপর ২০১৬, ২০১৮ এবং ২০২১ সালে তুষারপাতের ঘটনা ঘটে এই মরুভূমিতে। অর্থাৎ গত ৬ বছরে চারবার তুষারপাত ঘটেছে। যা চিন্তায় ফেলছে বিজ্ঞানীদের।
একটা সময় সবুজে সয়লাব ছিল সাহারা। যদি এখন শুকনো, খড়খড়ে। তবে আশা করা যাচ্ছে, আগামী ১৫০০০ বছরের মধ্যে আবারও সবুজে ভরে উঠবে এই মরুভূমি।
পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা। আর সেই মরুপ্রান্তরের মাঝে হঠাৎ কিছুটা জুড়ে বরফের চাদর চোখে পড়লে তো অবাক লাগেই। প্রশ্ন উঠছে, বদলে যাচ্ছে কি সাহারা। বদলে যাচ্ছে কি মরুভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জীববৈচিত্র্য।
সাহারা মরুভূমিতে তুষারপাত যেন ক্রমশ একটা রীতিতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আর সেইসঙ্গে উঠে আসছে কিছু প্রশ্নও। শুষ্ক মরুভূমিতে তুষারপাতের ঘটনা কি আদৌ স্বাভাবিক? নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই সেখানে তুষারপাত ঘটছে?
আসলে মরুভূমি মানে আমাদের মনের মধ্যে প্রথম যে ছবিটা ভেসে ওঠে, সেটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। কারণ সূর্যের আলো থাকার সময়ে মরুভূমির উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। সাহারা মরুভূমির উষ্ণতা কোথাও কোথাও ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশেও পৌঁছে যায়।
কিন্তু সেখানেই আবার রাতের উষ্ণতা নেমেও যায় অস্বাভাবিকভাবে। এখনও অবধি জানা তথ্য অনুসারে ২০০৫ সালে আলজিরিয়া শহরের কিছু অঞ্চলে উষ্ণতা পৌঁছেছিল -১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই উষ্ণতায় তুষারপাত খুবই স্বাভাবিক, যদি বাতাসে যথেষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে।
এখন সাহারার বাতাসে যে জলীয় বাষ্পের যথেষ্ট অভাব, সেটাও নতুন করে উল্লেখ করার কিছু থাকে না। বৃষ্টিপাত হয় না বলেই সেখানে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও মনে রাখা প্রয়োজন, সাহারা মরুভূমির তিনদিকেই রয়েছে সমুদ্র।
ফলে সেখান থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু স্থলভাগের দিকে এসে পড়তেই পারে। যদিও এক্ষেত্রে সাধারণত মরুভূমির উষ্ণ বায়ুর সংস্পর্শে এসে জলীয় বাষ্প আরও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়, এবং তুষারপাতের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয় না।
কিন্তু সাহারার পশ্চিমেই আবার রয়েছে অ্যাটলাস পর্বতমালা। অ্যাটলাস পর্বতের ঢাল বেয়ে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর নিচে নেমে আসা অসম্ভব নয়। আর পরপর ২ বছর অ্যাটলাস পর্বতের কাছাকাছি অঞ্চলেই তুষারপাত ঘটতে দেখা গিয়েছে।
এমনটা অবশ্য এই প্রথমও নয়। ১৯৭৫ সাল থেকে সাহারার উপর কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে নজরদারি শুরু হয়েছে। আর তারপর থেকে ৫ বার তুষারপাতের ঘটনা জানা গিয়েছে সাহারা মরুভূমিতে। এর আগে তুষারপাত ঘটত কিনা, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এইন সেফরায় একবার তুষারপাত হয়েছিল। সেবার আধা ঘণ্টার তুষারঝড়ে বরফে ঢেকে গিয়েছিল প্রায় পুরো অঞ্চল। সাহারা মরুভূমির এইন সেফরা শহরটি অ্যাটলাস পর্বতমালায় ঘেরা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ২৮০ ফুট ওপরের এ শহরে শীতের সময়ে তাপমাত্রা থাকে ৩-৬ ডিগ্রির মধ্যে। ১৮৮১ সালে যাত্রা শুরু করা এইন সেফরার তাপমাত্রা মাইনাস ১০ দশমিক ২ ডিগ্রিতে নেমে যায়।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমশ তুষারপাতের পরিমাণ বাড়ছে। তুষারপাতের ঘটনা নতুন না হলেও তার এই ঘনঘটা আশঙ্কা জাগায়। এর পিছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থাকতেও পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬:৫০
আপনার মতামত জানানঃ