সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রে লবিং প্রতিষ্ঠান ভাড়া নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সরকার যে ইতিমধ্যেই তিনটি লবিং প্রতিষ্টানের দ্বারস্থ হয়েছে, তা তারা দৃশ্যত জানতেন না।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবিরের জন্য একটি লবিং ফার্মকে প্রতি বছর ৩ লাখ ২০,০০০ হাজার ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সব মিলিয়ে ৮ বছরে ২.৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ওই লবিং প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫ সাল থেকে বিজিআর গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স নামক ওই লবিং প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
তবে ২০২১ সালে ৭৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে আরও দুইটি লবিং কোম্পানির সঙ্গে স্বল্পমেয়াদী চুক্তি করে সরকার। গত বছর তাই যুক্তরাষ্ট্রে তদবিরের পেছনে মোট সরকারি ব্যয় পৌঁছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ডলারে।
লবিংয়ের খুঁটিনাটি
এই লবিং ফার্ম সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে গত বছরের ২০ অক্টোবর। তবে এতে দেখা যায়, সরকার ও বিজিআর-এর চুক্তি চলবে অন্তত ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত।
প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটিকে ২৫ হাজার ডলার দেয়ার শর্তে গত বছর ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নতুন চুক্তি সই করেন। চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশ সরকারকে কৌশলগত জনসংযোগ ও সরকার সম্পর্কিত পরামর্শ দেবে বিজিআর।”
২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার এরকম আরও দুইটি লবিং প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া করে। তবে তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ সংক্ষিপ্ত। এদের একটি হলো ফ্রিডল্যান্ডার কনসাল্টিং গ্রূপ, যাদের সাথে চুক্তি হয় গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর।
তাদের দায়িত্ব ছিলো যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক আয়োজন করা। এই প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার ডলার দেয়া হয়।
আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো কোনওয়াগো কনসাল্টিং। তাদের সঙ্গে এক মাসের জন্য বাংলাদেশ সরকার চুক্তি করে ২০২১ সালের ২৬ জুলাই।
তাদের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের বৈদেশিক গ্রাহক হলো বাংলাদেশ সরকার, তবে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট (বিইআই)-এর মাধ্যমে এই চুক্তিতে উপনীত হয় দুই পক্ষ।
৩৫ হাজার ডলারের এই চুক্তিতে বিইআই-এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সালমান রহমান চুক্তিতে সই করেন। সালমান রহমান আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা।
কী কারণে এই লবিং?
নেত্র নিউজের সূত্র মতে, বাংলাদেশ সরকারের এসব লবিং প্রচেষ্টার বিষয়ে জানা সম্ভব হয়েছে কারণ মার্কিন আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তি যদি বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে তদবির করে, তাহলে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর এ সংক্রান্ত আর্থিক ও অন্যান্য তথ্য বিবরণী প্রকাশ করতে হবে।
বিরোধী দলগুলোর বর্জন করা ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস পর, অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বিজিআর-এর তদবির কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছর সরকার ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার ব্যয় করে।
দাখিলকৃত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে এই আট বছরে বিজিআর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট, প্রতিনিধি পরিষদ, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তদবির করেছে।
তবে ঠিক কোন কোন ইস্যুতে এই তদবির করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। বিজিআর শুধু উল্লেখ করেছে, তদবিরের বিষয়বস্তু যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সাথে সংশ্লিষ্ট।
তবে প্রকাশিত নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে যে, তাদের অন্যতম কাজ ছিল বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জবাব দেয়া, সরকারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিতরণ করা এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক খবরাখবর প্রচার করা।
কারা জড়িত?
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিজিআর-এর তিনজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সরকারের হয়ে তদবির করেছেন। এরা হলেন ওয়াকার রবার্টস, মায়া সিডেন, এরা দুজনই প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক চর্চা বিষয় সহ-প্রধান, এবং মার্ক টাবলারাইডস।
এদের মধ্যে রবার্টস প্রতিনিধি পরিষদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারীর সঙ্গে দেখা করেছেন।
সিডেন যাদের কাছে তদবির করেছেন, তারা হলেন হোয়াইট হাউজের ক্যাবিনেট সেক্রেটারির বিশেষ সহকারী, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের চিফ অফ স্টাফের উপদেষ্টা, জ্বালানি মন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিফ অফ স্টাফ।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫১২
আপনার মতামত জানানঃ