আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তান সীমান্তের কাছে বিস্ফোরণে অন্তত ৯ শিশু নিহত হয়েছে। সোমবারের এই বিস্ফোরণে আহত হয়েছে আরও কমপক্ষে চারজন।
তালিবানের নিয়োগকৃত দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের গভর্নরের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বিস্ফোরণে হতাহতের এই তথ্য জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের লালোপার জেলায় খাদ্য সামগ্রী বিক্রির একটি গাড়ি পুরোনো অবিস্ফোরিত মর্টাল শেলে আঘাত হানলে বিস্ফোরণ ঘটে।
তবে এই বিস্ফোরণের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
আফগানিস্তানে তালিবানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান কার্যালয় নানগারহার প্রদেশে রয়েছে।
গত বছরের আগস্টের মাঝের দিকে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে বিতাড়িত করে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানে কয়েকটি হামলা চালিয়ে আইএস।
তবে দেশটিতে ২০১৪ সাল থেকে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে মধ্যপ্রাচ্যের এই সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী। সেই সময় থেকে দেশটিতে কয়েক ডজন ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে আইএস।
সেখানে প্রায়ই সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিমদের হামলার নিশানা বানায় আইএসের সদস্যরা। কয়েক দশকের যুদ্ধ এবং সংঘাতে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অবিস্ফোরিত স্থল মাইন এবং অন্যান্য গোলাবারুদ রয়েছে। এসবের বিস্ফোরণে প্রায় ভুক্তভোগী হচ্ছে দেশটির শিশুরা।
আফগানিস্তানে আইএসের উপস্থিতি
ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে আফগানিস্তানে কাজ করা শুরু করে আইএস-কে।
২০১৯ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, সিরিয়া ও ইরাকে আইএস অঞ্চল হারানোর পর আফগানিস্তানে তাদের অঙ্গসংগঠন আইএস-কের হাতে সন্ত্রাসবাদ অর্থায়নের জন্য কোটি কোটি টাকা রয়েছে।
তবে আফগানিস্তানে অঞ্চল দখলে আইএস-কে কখনো সফল হয়নি। মসজিদ, স্কুল, বিয়ে অনুষ্ঠানে বেসামরিক নাগরিকদের হামলাই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য। আফগানিস্তানে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংস হামলার জন্য সুপরিচিত আইএস-কে। শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন প্রায়ই তাদের হামলার শিকার হয়।
২০১৫ সালের দিকে আইএস-কের প্রতিষ্ঠাতা সাঈদসহ মূল নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় প্রাণ হারান। তা সত্ত্বেও আফগানিস্তানে আইএস-কের বিনাশ হয়নি।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের কোনার ও নানগারহার প্রদেশে আইএস-কের দেড় হাজার থেকে দুই হাজারের বেশি যোদ্ধা রয়েছে। এ ছাড়া ছোট ছোট দলে তারা আফগানিস্তান জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
আফগানিস্তানে আইএস-এর হুমকি কতটা?
তালিবানের উত্থানের পর নীতিনির্ধারণীবিষয়ক সংস্থা এশিয়া প্রোগ্রামের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আফগানিস্তানে আইএস নিশ্চিতভাবে ফের শক্তিশালী হবে। তবে এখনই তারা দূরের কোনো লক্ষ্যে হামলা চালাতে পারবে না।’
তবে আইএসের উপস্থিতি তালিবানকে অস্তিত্ব সংকটে ভোগায়। দীর্ঘদিন ধরে আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছে তালিবান। গত সপ্তাহে বাইডেন বলেছিলেন, তালিবান ও আইএসের মধ্যে মিল হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মাইকেল কুগেলম্যান জানান, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সুযোগ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ছাড়বে না। স্থানীয় পর্যায়ে হামলার পাশাপাশি সিরিয়া বা ইরাকের পরিবর্তে এখন আফগানিস্তানে আস্তানা গাড়তে পারে এসব সংগঠন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, আফগানিস্তানে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের ৮ থেকে ১০ হাজার যোদ্ধা এ মুহূর্তে অবস্থান করছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২০০
আপনার মতামত জানানঃ