করোনার নতুন রূপ ওমিক্রনের প্রভাব এরই মধ্যে বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ওমিক্রন ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে নেয়া হচ্ছে কঠোর ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। এরই মধ্যে করোনার আরও একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা-কল্পনা। করোনার নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়েছে ফ্রান্সে। ধরনটির নাম ‘আইএইচইউ’ বা ‘বি.১.৬৪০.২’।
প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওমিক্রনের চেয়েও বেশি মারাত্মক হতে পারে এটি। ধরনটি শনাক্ত করেন ‘আইএইচইউ মেডিটেরিয়ান ইনফেকশন ইনস্টটিউট’র গবেষকরা।
তাদের দাবি, এটির ইতোমধ্যে ৪৬ বার মিউটেশন বা রূপ পরিবর্তন হয়েছে, যা ওমিক্রনের (৩২ বার) থেকেও বেশি। তারা বলছেন, ধরনটির আচরণ সম্পর্কে বলার সময় এখনো আসেনি। এ ছাড়া ধরনটি অন্য কোনো দেশে ছড়িয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
ফ্রান্সের মার্সাইলে ১২ জন রোগীর শরীরে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা গেছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা জানিয়েছেন, প্রায় ৪৬ বার মিউটেশন হয়েছে এই ভ্যারিয়েন্টের। সেই সঙ্গে তারা আরও জানিয়েছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা রয়েছে।
মেডরিক্সভ নামক একটি গবেষণা জার্নালে পোস্ট করা গবেষণাপত্রে এই ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গবেষকেরা বলেছেন, গত বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় প্রাপ্তবয়স্ক এক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় প্রথম আইএইচইউ ধরন শনাক্ত হয়। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ারও আগের ঘটনা এটি। কারণ, ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে গত ২৪ নভেম্বর।
ফ্রান্সে যে ব্যক্তির শরীরে প্রথম আইএইচইউ শনাক্ত হয়েছে, তিনি আক্রান্ত হওয়ার কয়েক দিন আগে ক্যামেরুন ভ্রমণ করে দেশে ফিরছিলেন। এরপর দক্ষিণাঞ্চলীয় ফ্রান্সে আরও ১১ জনের শরীরে আইএইচইউ শনাক্ত হয়।
করোনাভাইরাসের আগের ধরনগুলোর তুলনায় এটি বেশি শক্তিশালী কি না কিংবা দ্রুত ছড়ায় কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এখন পর্যন্ত আইএইচইউকে ‘উদ্বেগের ধরন’ বলে উল্লেখ করেনি।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউজ ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএইচইউ ধরনটির দিকে নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার কোভিড ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কর্মকর্তা আবদি মাহামুদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আইএইচইউ যে দ্রুতগতিতে ছড়ায়নি, সেটা ইতিবাচক লক্ষণ। এর বিস্তারের যথেষ্ট সুযোগ ছিল।
ফ্রান্সের মার্সাইলে ১২ জন রোগীর শরীরে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা গেছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা জানিয়েছেন, প্রায় ৪৬ বার মিউটেশন হয়েছে এই ভ্যারিয়েন্টের। সেই সঙ্গে তারা আরও জানিয়েছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি দেখা যায় এটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে, তবেই কেবল আইএইচইউকে ‘উদ্বেগের ধরন’ ঘোষণা করা হবে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত আইএইচইউ ধরন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের ভাইরোলজিস্ট টম পিকক বলেন, বি.১.৬৪০.২ ধরনটি নিয়ে এ মুহূর্তে উদ্বিগ্ন হওয়ার হওয়ার কিছু নেই। করোনার এ ধরন বেশ ভালো রকমের জটিলতা তৈরি করতে পারত; তবে তেমনটা ঘটেনি।
রোগতত্ত্ববিদ এরিক ফিগেল ডিং এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন, নতুন নতুন ধরন শনাক্ত হতেই থাকবে। তার মানে এই নয় যে এগুলো অনেক বেশি বিপজ্জনক হবে।
তিনি মনে করেন, অনেক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সংক্রমণের ক্ষমতা কতটা বাড়ছে, তার ওপরই নির্ভর করে ধরনটি কতটা বিপজ্জনক হবে।
ডিং বলেন, ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রামক এবং তা মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে; এখন নতুন ধরনটি এমন কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
এদিকে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যেই ফ্রান্সে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ার ভেরন সংসদকে বলেছেন, সত্যি করোনার বিশাল ঢেউ আঘাত করতে যাচ্ছে তবে আমরা আতঙ্কিত হব না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ২৪ ঘণ্টায় ১০ লাখের বেশি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড গড়েছে। সোমবার (৩ জানুয়ারি) এই করোনা সুনামির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ব্লুমবার্গের খবর বলছে, করোনার নতুন ধরন ওমক্রিন এখন আমেরিকানদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে।
অতিসংক্রামক এই ধরনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি। এর আগে বিশ্বের কোনো দেশে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়নি।
চারদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ লাখ ৯০ হাজার মানুষ মহামারিতে সংক্রমিত হয়েছিলেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ করোনা আক্রান্তের মাধ্যমে রেকর্ড গড়ল তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৫
আপনার মতামত জানানঃ