করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বজুড়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে। দেশে দেশে উচ্চহারে সংক্রমণ ঘটছে ওমিক্রনের। তবে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মানবস্বাস্থ্যের জন্য শাপেবর হতে পারে। এটি মানবদেহে প্রাকৃতিক ভ্যাকসিনের কাজ করতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই ধরনটি সারা বিশ্বের জন্য ‘প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন’ হতে পারে। আর এর মাধ্যমেই শেষ হতে পারে করোনা মহামারি।
‘প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন’ কেন?
বিশেষজ্ঞ বলছেন, ওমিক্রন নামের যে ভ্যারিয়েন্ট নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে, সেটি মানবস্বাস্থ্যের জন্য শাপেবর হতে পারে। এটি মানবদেহে প্রাকৃতিক ভ্যাকসিনের কাজ করতে পারে। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এর বিরোধী মতও আছে।
রিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট বিভাগের অধ্যাপক ইয়ান জোন্স বলেন, ‘ওমিক্রন একটি প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন হওয়ার ধারণা সঠিক হিসেবে ধরে নেয়া যায়। এমন ধারণার পেছনের যুক্তি হলো, ওমিক্রন অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমণযোগ্য একটি ধরন।’
এই ভাইরাস বিশেষজ্ঞের মতে, করোনার প্রভাব অন্যান্য ধরনের তুলনায় মৃদু। তাই এটি গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি না করে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এতে করে বিপুলসংখ্যক মানুষের দেহে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হবে।
আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ওমিক্রন সংক্রমিত রোগীদের থেকে নেয়া রক্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংস্পর্শে এলে অ্যান্টিবডি ৪ দশমিক ৪ গুণ বেড়ে যায়।
বিপরীতে অন্যান্য গবেষণায় ক্রস-ভ্যারিয়েন্ট ইমিউনিটির বিষয়ে দেখা গেছে যে, ডেল্টার প্রতিক্রিয়ায় তৈরি অ্যান্টিবডিগুলো ওমিক্রনের প্রতি খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
অধ্যাপক জোন্স দ্য মেইল অনলাইনকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে করোনার আরও যেসব ধরন আসবে, সেগুলো আরও বেশি হালকা হতে পারে। আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রাপ্তবয়স্কদের বুস্টার ডোজ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা শিগগিরই কমে আসতে পারে।
‘ওমিক্রন যদি একটি ক্ষয়প্রাপ্ত স্ট্রেইন হয়ে থাকে, তবে পরবর্তী সংস্করণগুলো আরও হালকা হতে পারে। অন্যথায় উপযুক্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে আসতে পারে।’
ভাইরাসের বিবর্তন একটি কম গুরুতর স্ট্রেনের দিকে ঝুঁকবে, যা আপনি ওই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে করতেই জয়ী হবেন। যেসব আমরা সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য করি।
অধ্যাপক জোনস বলেন, ‘ওমিক্রনকে অতি সংক্রমণের একটি প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন হিসেবে বর্ণনা করাটা সঠিক। ওমিক্রন অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য হলেও মানুষকে ব্যাপকভাবে অসুস্থ করে তোলার মাপকাঠিতে এর প্রভাব মৃদু।
‘আপনি করোনার যে ধরনেই সংক্রমিত হোন না কেন তাতে আপনার দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ওমিক্রনকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে পারি। কারণ এর মাধ্যমে আমরা ঝুঁকি ছাড়াই বা অনেক কম ঝুঁকি নিয়েও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা পেতে পারি।’
প্রাণহানির সম্ভাবনা কম
কোভিডের মহামারি পর্যায়ে আফ্রিকায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর সাউথ আফ্রিকায় একটি গবেষণা তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। সাউথ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি) এবং প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা গবেষণাটি চালান।
তাতে বলা হয়, ওমিক্রনে প্রাণহানি অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট বৃদ্ধির সময় দেখা মাত্রার মাত্র এক-চতুর্থাংশ। গবেষকরা ৪৫০ জন রোগীর রেকর্ড পরীক্ষা করে জানান, গত মাসে কোভিড নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মাত্র ৪.৫ শতাংশ মারা গেছে। অথচ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের সময়ে মৃত্যুর হার ছিল ২১ দশমিক ৩ শতাংশ।
গবেষক দলটির এই প্রতিবেদন একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, করোনা মহামারির অন্ধকারতম দিনগুলোর ‘শেষের আশ্রয়দাতা’ হতে পারে এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট।
এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা বিষয়টিতে ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেন। তাদের দাবি, ওমিক্রন প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের একজন ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রদীপ আওয়াতে। প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন যদিও ডেল্টার চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তবে খুব কমসংখ্যক রোগীকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। যদি এটি-ই ঘটে, তাহলে ওমিক্রন একটি প্রাকৃতিক টিকা হিসেবে কাজ করবে।’
তবে রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট সাইমন ক্লার্ক ওমিক্রনকে ‘প্রাকৃতিক ভ্যাকসিন’ লেবেল দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে আমাদের যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে তা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ততটা ভালোভাবে কাজ করে না। তাই এটি অন্যদিকে কাজ করে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। ভাইরাল বিবর্তন সাধারণ সর্দি-কাশির একমুখী রাস্তা- এমন ধারণা হবে চরম গোঁয়ারতুর্মি।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৭২৮
আপনার মতামত জানানঃ