‘পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র’ বলে যে গর্ব ভারত করতো, তা আজ মোদির ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। সম্প্রতি বেশ কিছু সূচকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের অবস্থান নিচে নেমে গিয়েছে আশঙ্কাজনকভাবেই। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ভারতে বিপন্ন হয়েছে গণতন্ত্র। প্রতিবাদ করলেই সরকারের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে। বিনা কারণে ইউএপিএ’র ধারা দিয়ে মানুষকে হেনস্থা করা হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্থা ‘সিভিকাস’।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দিক থেকে ভারতকে ‘নিপীড়িত’ দেশগুলোর তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) শুরু হওয়া গণতন্ত্রের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সম্মেলনের ঠিক আগেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
যেভাবে দেশটিতে বিপর্যস্ত গণতন্ত্র
গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে অধোগতির জন্য নরেন্দ্র মোদী এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির সরকার দায়ী প্রশ্নাতীতভাবেই। ‘সিভিকাস পিপল পাওয়ার আন্ডার অ্যাটাক ২০২১’ প্রতিবেদনে ভারতের সম্পর্কে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, যেমন দমনমূলক বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ) মোদি সরকার পরিকল্পিতভাবে অপব্যবহার করছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময়ে কয়েক ডজন মানবাধিকার কর্মীকে বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছে এবং তাদের জামিনের ব্যাপারে কোনো সাহায্য করা হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্থাটির রিপোর্টে ২০১৮-র ভীমা কোরেগাঁও- এলগার প্রসাদ জাতি হিংসার মামলায় সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজকে আটকে রাখার প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের বাড়িতে অভিযান এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রয়োগের কথাও বলা হয়েছে। এমনকি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের দমানোর জন্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে রিপোর্টে।
সাংবাদিকদের উপর পুলিশের অত্যাচার, রাজনৈতিক নেতাদের চাপ সৃষ্টি, দুর্নীতিবাজ অফিসার ও অপরাধমূলক গোষ্ঠীর প্রতিশোধের হুমকি; সব মিলিয়ে ভারতের খর্ব হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা৷
দ্য ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের এক রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, হিন্দুবাদী সরকারের লাইনে থাকতে সংবাদমাধ্যমগুলির উপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে৷ যে সব সাংবাদিকরা হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বা কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে লিখছেন বা মুখ খুলছেন, তাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে চরম হেনস্থা, হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ বিশেষ করে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন মহিলা সাংবাদিকরা৷
এদিকে, ফ্রিডম হাউস বলছে, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নাগরিক স্বাধীনতার অবনতি হচ্ছে। তারা আরো বলেছে যে “মুক্ত রাষ্ট্রের উচ্চ কাতার থেকে ভারতের এই পতন” বিশ্বের গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে।
মোদীর শাসনকালে “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সেন্সরশিপের ক্ষেত্রে ভারত এখন পাকিস্তানের মতই স্বৈরাচারী, এবং বাংলাদেশ ও নেপালের চাইতেও সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ। কর্তৃপক্ষ গণতন্ত্রকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ায় এবং নাগরিক অধিকারের ওপর ‘ক্র্যাকডাউন’ হওয়ায় ভারতের এই অবনতি হয়েছে। মোদীর বিভিন্ন নীতিসমূহ ভারতে মুসলিম-বিরোধী অনুভূতি এবং ধর্মীয় সংঘাত উস্কে দিয়েছে, এবং তা ভারতের গণতন্ত্রের কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
সিভিকাস দেশগুলোকে পাঁচটি বিভাগে ভাগ করেছে, যেখানে ‘উন্মুক্ত’ দেশগুলোর জনগণ গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা উপভোগ করছে এবং ‘নিপীড়িত’ দেশের বাসিন্দারা কঠোর বিধিনিষেধের সম্মুখীন হয়েছেন। ভারত ছাড়াও ‘নিপীড়িত’ স্থান পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে– বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং আফগানিস্তান। সরকারের কাছে মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে এ রিপোর্টে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪০৫
আপনার মতামত জানানঃ