সারাবছরই আর্কটিক অঞ্চলে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের কাছাকাছি। শীতকালে কখনো কখনো সেই তাপমাত্রা পৌঁছায় -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পৃথিবীর উত্তর মেরুর নিকটবর্তী এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে সামান্যই। তুষারপাতই এই অঞ্চলের পরিবেশ ও জলবায়ুর মূল নিয়ন্ত্রক। তবে এবার উষ্ণায়নের জেরে বদলে যাচ্ছে আর্কটিকের সেই চিরচেনা চরিত্র।
সেই তুষারপাতের জায়গাই ক্রমশ দখল করে নিচ্ছে বৃষ্টিপাত। এমনকি এই শতাব্দীর শেষে সম্পূর্ণভাবেই বদলে যাবে গোটা অঞ্চলটির জলবায়ুগত বৈচিত্র্য। এমনটাই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা।
গত আগস্ট মাসেই গ্রিনল্যান্ডের বরফাবৃত শৃঙ্গে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি নজর কাড়ে গবেষকদের। আর্কটিকের হিমায়িত অঞ্চলে শরৎকালে এই ধরনের বৃষ্টিপাত বেশ অবাক করার মতোই। আর তারপরেই এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নেমেছিলেন কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
সেই গবেষণাতেই উঠে আসে ক্রমশ বদলাচ্ছে আর্কটিকের জলবায়ু। আর তা যদি চলতে থাকে তবে এই শতকের শেষে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হবে তুষারপাতের তিনগুণ।
গবেষকদের মডেল অনুযায়ী আগামী আট দশকে কমপক্ষে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা। অবশ্য সাম্প্রতিক কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের সমস্ত দেশগুলি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কার্বন নির্গমন কমিয়ে ২.৪ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেডের মধ্যে রাখা হবে উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণ। সেই প্রতিশ্রুতি আদৌ কতটা ভরসাযোগ্য, তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে সন্দেহ।
যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ বা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেও রাখা হয়, তাতেও আর্কটিক অঞ্চলে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে বলেই দাবি গবেষকদের। বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া ডেকে আনবে আরও বড়ো বিপদ।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, আর্কটিকে শরৎ ঋতুটাই সম্পূর্ণভাবে বদলে যেতে পারে বর্ষাকালে। পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের বৃদ্ধি ক্রমশ ত্বরান্বিত করবে বরফের গলন। যার ফলে, এই শতকের শেষে গ্রিনল্যান্ড-সহ একাধিক মেরুপ্রদেশের অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে বরফ শূন্য হয়ে যেতে পারে। সমুদ্রে মিশে যেতে পারে আর্কটিকের সমস্ত হিমবাহ। সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, বেরিয়ে আসবে পার্মাফ্রস্ট বা হিমায়িত মাটি।
বরফের আস্তরণ সরে যাওয়ায় সেই নমনীয় মাটি কতটা বসবাসযোগ্য হবে মানুষের কাছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। হিমায়িত অবস্থায় আটকে থাকা নানান ক্ষতিকর অণুজীবও বেরিয়ে আসতে পারে প্রকৃতিতে। থেকে যাচ্ছে নতুন মহামারীর আশঙ্কাও।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, মেরুর বরফ গলতে গলতে নিচের স্তর থেকে বেরিয়ে আসবে বহু যুগ ধরে চাপা পড়ে থাকা অজানা সব জীবাণু। এমনকী বেরিয়ে আসতে পারে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যও। সেই শীতল যুদ্ধের সময়ে নিউক্লিয়াস রিঅ্যাক্টর, সাবমেরিন থেকে যেসব পদার্থ নিঃসৃত হয়েছে, সেসবও প্রকাশ্যে আসতে পারে।
শীতল যুদ্ধের সময় যেসব পরমাণু চুল্লি, সাবমেরিনের অংশ এতদিন ধামাচাপা পড়েছিল, সেসবও বেরিয়ে আসবে স্থায়ী হিমায়িত অংশ গলে গেলে। অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় বিকিরণের অভিশাপও নেমে আসবে।
‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ নামের এক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেরু অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের উপর কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে, সে বিষয়ে কোনও ধারণা করা যাচ্ছে না এখনই। এর জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় অংশেই প্রভাব পড়বে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে স্থায়ী হিমায়িত অংশের উপর নানা গবেষণা করেও এর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা করা যাচ্ছে না। এটি যথেষ্ট জটিল বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫২২
আপনার মতামত জানানঃ