বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরুষের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে আছেন নারীরা। আর নারীদের মধ্যে গর্ভবতী নারীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা আছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেলের আলোচনায় নতুম এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গর্ভবতী নারীদের ক্ষতির চেয়ে মানুষ পোষা প্রাণীদের ক্ষতি নিয়ে বেশি সচেতন বলেও এক সমীক্ষায় জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘জেন্ডার’। সেই সূত্রে গর্ভবতী নারীদের ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব সংক্রান্ত এই খবর প্রকাশিত হয়। সূত্র মতে, নারীরা বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর বেশি নির্ভরশীল। সে কারণেই তাদের ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যেভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে গর্ভবতী নারী ও ভ্রূণ
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, কার্বন নিঃসরণ, মোটরগাড়ির ধোঁয়া, জীবাশ্ব জ্বালানি, কাঠ পোড়ানো ও দাবানলের ধোঁয়ার কারণে গর্ভবতী নারী ও গর্ভস্থ ভ্রূণ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ ও মানসিক চাপের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে তারা।
সাম্প্রতিক গবেষণায় বায়ু দূষণ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু বিপর্যয়ের তীব্রতা অনেকটাই বেড়েছে বলে জানা গেছে। আর এই তীব্রতাই প্রসূতি, ভ্রূণ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ কোটি ২০ লাখ প্রসবের ঘটনা পর্যালোচনা করে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন দেখেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বায়ুদূষণ ও উষ্ণায়ন প্রসূতি, ভ্রূণ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব গর্ভধারণ পর্যায় থেকে শুরু করে মৃত শিশু জন্ম দেওয়া, জন্মহার কমে যাওয়া, কম ওজনের শিশু জন্ম দেওয়া, নির্ধারিত সময়ের পূর্বে শিশুর জন্মসহ নানা সমস্যার সঙ্গে জড়িত।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, বায়ু দূষণের সঙ্গে জড়িত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণা মায়ের ফুসফুসে পৌঁছে যায়। এর ফলে তাদের ফুসফুসের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এসব কণা প্লাসেন্টায় পৌঁছে প্রদাহও তৈরি করে। এটি মূলত গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস ও প্রি-অ্যাকলেমসিয়ার জন্য দায়ী।
পাশাপাশি অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া গর্ভবতী নারীর মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে ঝিঁমুনি থেকে শুরু করে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টও হতে পারে। জানা যায়, অ্যাজমা আছে এমন নারীদের পাশাপাশি সংখ্যালঘু বিশেষ করে কালো নারীদের গর্ভাবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বেশি।
খুব কম মানুষই সচেতন
এখানে বিবেচ্য বিষয়, খুব কমসংখ্যক মানুষ গর্ভবতী নারীদের এই বিপদ সম্পর্কে অবহিত। গর্ভবতী নারীদের চেয়ে পোষা প্রাণীদের রক্ষার বিষয়ে বেশি তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে রয়েছে। এটি শুধু ধারণা নয়, প্রমাণিত সত্য।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ১০৫টি হিট সেফটি ওয়েব পেজ, ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান ও ১৫টির বেশি ঘনবসতিসহ যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি শহরের মোট ৩২ লাখ লোকের ওপর করা এক গবেষণা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, শুধুমাত্র শিকাগো ও ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রকাশিত দু’টি গবেষণাপত্রে গর্ভাবস্থায় তাপমাত্রার প্রভাব সম্পর্কিত বিষয় বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন গবেষণায় পোষা প্রাণীর ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে আলোচনা পাওয়া গেছে ৩৭ বার।
বেশ আগে ২০২০ সালেই হার্ভার্ডের এক গবেষণায় তাপমাত্রার অতিরিক্ত বৃদ্ধির সঙ্গে গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিসের সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধি নয়, যেকোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যেমন হারিকেনও (ঘূর্ণিঝড়) গর্ভবতী মায়েদের ওপর অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করে, যা অকাল জন্মের হার বাড়িয়ে দিতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮১৫
আপনার মতামত জানানঃ