‘রাস্তা আটকে কিংবা উন্মুক্ত কোনো স্থানে প্রকাশ্যে নামাজ আদায় করা যাবে না’ এই দাবিতে শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগাঁওয়ে। শুক্রবার সকাল থেকেই ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনিতে জমায়েত হতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন স্থানে জুমার নামাজে বাধা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
ত্রিপুরায় হামলার পর এবার দেশটির কট্টর ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে উঠেছে জুমার নামাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। এ কারণে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হরিয়ানায় অন্তত ৩০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সূত্র মতে, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মুসলিমদের বাধা দেওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই কট্টর ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্য।
মুসলিমদের নামাজে বাধা দেওয়ার এই ঘটনা দেশটিতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিল। নয়াদিল্লির উপকণ্ঠের শহর হরিয়ানার গুরুগাঁওয়ে খোলা জায়গায় মুসলিমদের জুমার নামাজ পড়া বন্ধ করতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে আসছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের আগে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় পুলিশ কয়েকশ’ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে কমপক্ষে ৩০ জনকে আটক করা হয়।
গুরুগাঁওয়ের সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট অনিতা চৌধুরী বলেন, ‘এখানে সবকিছুই শান্তিপূর্ণ আছে। যারা এখানে নামাজে বাধা দিতে এসেছিল, আমরা তাদের আটক করেছি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করেছি। আলোচনায় কাজ না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, মুসলিমরা নির্ধারিত ৩৭টি এলাকায় নামাজ পড়েছেন এবং যারা নামাজ পড়বেন তাদের পুরোপুরি সুরক্ষা দেওয়া হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ সম্পর্কিত ভিডিওতে দেখা যায়, শুক্রবারের ওই ঘটনার সময় একদল মানুষ মাস্ক পরে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকেই নামাজ বন্ধ করো, বন্ধ করো স্লোগান দেন। শুক্রবার যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের হাতে ‘গুরুগাঁও প্রশাসন, ঘুম ভেঙে জেগে ওঠো’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এ নিয়ে গুরুগাঁওয়ের প্রশাসন জানায়, এলাকায় নমাজের জন্য ৩৭টি স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া রয়েছে। সেখানে নমাজে বাধা দেয়া হলে পুলিশ-প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে। যারা নমাজে যোগ দিতে আসবেন, তাদের নিরাপত্তার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, রাস্তা আটকে এমনকি প্রকাশ্য কোনও স্থানেই নমাজের আয়োজন করা যাবে না। কেবলমাত্র মসজিদের ভেতরেই নমাজ আদায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তবে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষেই দীর্ঘ দিন ধরে গুরুগাঁওয়ের ৩৭টি মুক্ত স্থানে শুক্রবারের নমাজের আয়োজন হয়ে আসছে।
তবে গুরুগাঁওয়ে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ২০১৮ সালেও ওই এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে মুসলিমদের শুক্রবারের জুমার নামাজ পড়া নিয়ে আপত্তি জানান হিন্দুরা। পরে জেলা কর্মকর্তারা হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে মধ্যস্থতা করে নামাজের জন্য ৩৫টি জায়গা নির্ধারণ করে দেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা মণ্ডপ এবং মন্দিরে হামলার ঘটনার পর ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের স্থাপনা ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় সীমান্তবর্তী পানিসাগর এলাকায় এর আগে গত বুধবার সহিংস ঘটনার পর রাজ্যের ১৫০টি মসজিদে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। শুক্রবার স্থানীয়রা জানান, “মুসলিমরা আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন”।
মানবাধিকার সংগঠন এপিসিআর সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে বলেছে, হিন্দুত্ববাদীরা কমপক্ষে ২৭টি হামলা চালিয়েছিল। ভিএইচপির লোকেরা ১৬টি মসজিদে হামলা চালিয়েছিল। কয়েকটি মসজিদে জোর করে ভিএইচপির পতাকা পুঁতে দেয়া হয়েছিল। কমপক্ষে তিনটি মসজিদে আগুন ধরানো হয়েছিল। উনাকটি জেলার পালবাজার মসজিদ, গোমতী জেলার ডোগরা মসজিদ এবং বিশালগড় জেলার নারোলা টিলা মসজিদে আগুন লাগানো হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১০৪০
আপনার মতামত জানানঃ