অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে নারীদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং কম সুযোগ-সুবিধার দেশ ভারত৷ এক গবেষণায় শিশুমৃত্যুর হার, কন্যা শিশু হত্যা, বাল্য বিবাহ এবং দাসত্বের মতো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের জন্য নারীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ভারতকে৷ এই ভারতে চলে প্রকাশ্যে বা গোপণে মেয়েদের বিক্রি। কখনও কখনও বিক্রি করা হয় সাময়িক সময়ের জন্য। অর্থাৎ কিছু মেয়েকে বারবার বিক্রি করা হয়।
সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেচগে ওড়িশায়। সূত্র মতে, বিয়ের মাত্র দু’মাস পরেই স্মার্টফোন কেনার জন্য স্ত্রীকে বৃদ্ধের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে স্বামী। সম্প্রতি ভারতের ওড়িশা প্রদেশের বোলঙ্গি জেলার বাসিন্দা ১৭ বছরের এক কিশোর এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
জানা গেছে, স্ত্রীকে নিয়ে ভারতের রাজস্থানে বিক্রি করে- সে একটি স্মার্টফোনে কেনে এবং বাড়িতে ফিরে এসে বলেন স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। পরে রাজস্থানের স্ত্রীকে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সূত্র মতে, ওই কিশোর রাজস্থানের একটি ইটের ভাটায় কাজ করতো। বিয়ের দুই মাস পর ২৬ বছর বয়সী স্ত্রীকে রাজস্থানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বারান জেলার ৫৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয় সে।
এদিকে, রাজস্থানের এই জেলার সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে; যে কারণে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করতে গিয়ে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে। তারা পুলিশকে বাধা দেয়। কারণ হিসেবে স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেন, ওই তরুণীকে তারা কিনে নিয়েছেন।
জানা যায়, চলতি বছরের জুলাইয়ে বিয়ে করেছিলেন তারা। বালাঙ্গীর জেলার বেলপাদা পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক বুলু মুন্ডা বলেছেন, ‘গত আগস্টে ওই দম্পতি একটি ইটের ভাটায় কাজ করার জন্য রায়পুর এবং ঝাঁসি হয়ে রাজস্থানে যায়। ইট ভাটায় কাজ নেওয়ার কয়েকদিন পর ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোর তার স্ত্রীকে বারান জেলার ৫৫ বছর বয়সী ব্যক্তির কাছে এক লাখ ৮০ হাজার রুপিতে বিক্রি করে দেয়।’
এই কিশোর হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করে কিছু অর্থ খরচ করে এবং নিজের জন্য একটি স্মার্টফোন কিনে। গ্রামে ফিরে আসার পর যখন স্ত্রীর পরিবার মেয়ের সম্পর্কে জানতে চায়; তখন ওই কিশোর দাবি করে, সে তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
কিন্তু ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যরা তার এই গল্প বিশ্বাস করেননি এবং তারা পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে পুলিশ তাদের কল রেকর্ড যাচাই-বাছাই করে এবং গল্পে ফাঁক খুঁজে পায়।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, স্ত্রীকে বিক্রি করে দিয়েছে। পরে ওই তরুণীর অবস্থান শনাক্ত করার জন্য পুলিশের একটি দল রাজস্থানের বালাঙ্গীরে যায়। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসীরা ওই তরুণীকে সেখান থেকে আনতে আমাদের পুলিশের দলকে বাধা দেয়। তারা দাবি করে, এক লাখ ৮০ হাজার রুপির বিনিময়ে ওই নারীকে কেনা হয়েছে। তাই তাকে ফেরত দেওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই নারীকে নিয়ে আসে পুলিশ।
সূত্র মতে, গত শুক্রবার অভিযুক্ত তরুণকে আদালতে তোলা হলে তাকে সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
ভারতে প্রকাশ্যে মেয়েদের বিক্রির প্রথা
মূলত, নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন এই সব নিয়ে যতই চর্চা হোক না কেন, ভারতেরর সরকার মেয়েদের অধিকার রক্ষায় যাই পদক্ষেপ করুন না কেন, দেশটির বাস্তবের চিত্র বড়ই ভয়ঙ্কর। ভারতে এই একুশ শতকেও বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে এখনও মেয়েদের প্রকাশ্যে বেচা কেনা চলে।
আইন-পুলিশ-সমাজ-রাষ্ট্রের সামনেই চলছে এসব অপকর্ম। এমনকি মেয়েদের ওপর এমন ভয়াবহ নির্যাতনের জন্য নেই কোনো অপরাধবোধ। মেয়েরাও যেন এই ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকই মনে করে! তেমনই এক জায়গা মধ্য প্রদেশের গোয়ালিয়র ডিভিশনের শিবপুরি জেলা। এখানে টাকার বিনিময়ে মেয়েদের কয়েক মাস বা বছরের জন্যে ভাড়া নেওয়া যায়। এই নিন্দনীয় কাজটিকে ধাদীচা প্রথা বলা হয়। ভয়ানক ব্যাপার হলো, প্রকাশ্য দিবালোকে খোলা বাজারে তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দরদাম চলতে থাকে।
রীতিমতো দৈনন্দিন সামগ্রীর মতোই গ্রামের বাজারে নিলামে তোলা হয় মেয়েদের। গ্রামের যে সব ধনী ব্যক্তিদের স্ত্রী অথবা প্রেমিকা নেই, তারা সাময়িক সময়ের জন্যে মেয়েদের ভাড়া নিতে পারেন মাত্র কয়েক হাজার টাকায়।
এখানেই শেষ নয়, পুরো বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য ও তথাকথিত আইনি করার জন্যে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি সই করা হয়। চুক্তি শেষ হলে তা আবার নবায়নও করতে পারেন সেই সব ধনী পুরুষরা। যে যত বেশি টাকা দেবেন, তার সঙ্গে তত বেশি দিন একজন মেয়েকে থাকতে হবে। তবে শুধু মধ্যপ্রদেশই নয়, ভারতের গুজরাটেও এই ধরনের প্রথার প্রচলন রয়েছে।
২০১৭ সালে এমনই এক ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে। ইন্দোরের এক ব্যক্তি বিয়ে বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে বিক্রি করে দেন ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে। অসংখ্যবার ধর্ষণের পর তাকে আরও একবার বিক্রি করে দেওয়া হয় শিবপুরী জেলার এক লোকের হাতে। কোনোরকমে সেখানে থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন সেই নির্যাতিতা। তার ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হয় মেয়ের স্বামীকে। তবে এভাবে এই প্রথা থামানো যাবে না। কীভানে যাবে, তাও অজানা। আধুনিক বিশ্বে ভারতের এই সংস্কৃতি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় মধ্যযুগে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৪৬
আপনার মতামত জানানঃ