আফগানিস্তানের কট্টর ইসলামি গোষ্ঠী তালিবানরা দেশটির সরকারি সামরিক বাহিনীর এক সদস্যের শিরচ্ছেদের পর নেচে গেয়ে উল্লাস করে। এর একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে সম্প্রতি।
অনলাইনের চ্যাটরুমে শেয়ার করা ৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তালিবানরা ‘মুজাহিদিন’ বলে চিৎকার করছে এবং মাটিতে পড়ে থাকা মাথাবিহীন দেহের চারপাশে উল্লাস করছে। ছয়জন তালিবান জঙ্গি লাশটি ঘিরে রেখেছেন। তাদের হাতে রয়েছে রাইফেল ও রক্তমাখা ছুরি।
এ নৃসংস ভিডিওটি এমন সময় প্রকাশ পেলো যখন তালিবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন দাবি করেছেন যে, তারা সহিংস নন, নারীরা ‘মৌলিক অধিকার’ পাবেন এবং নতুন সরকার একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলছে।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল বলেছে, গাঢ়-সবুজ রঙের ইউনিফর্ম পরিহিত মাটিতে যে ব্যক্তির মরদেহ পড়ে ছিল, তিনি আফগান সৈন্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ আফগান সামরিক বাহিনীকে গাঢ় সবুজ রঙের ইউনিফর্ম দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
রক্তমাখা ছুরি হাতে দুই ব্যক্তি মুজাহিদীনদের নামে স্লোগান দেন এবং ছুরি আকাশে ছুড়ে মারেন। এর এক পর্যায়ে তারা চিৎকার করে তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার প্রশংসা করতে শুরু করেন।
গতকাল শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) তালিবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বিবিসিকে বলেছেন, ‘২০০০ এর দশকের প্রথম দিকের রক্তপিপাসু ইসলামপন্থীদের চেয়ে বর্তমানে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে তালিবান জিহাদিদের।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানের জনগন। আমাদের অনেকেই জিহাদ করছিলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ২০ বছরের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি।’
‘এখন আমরা আমাদের জনগণের জীবন, আফগানিস্তানের পুনর্গঠন, জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণে মনোনিবেশ করেছি।’
সুহাইল আরও বলেন, আমি যদি অতীতের সাথে তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে, আমাদের গৃহযুদ্ধ ছিল, আমরা লড়াই করেছি। কিন্তু এখন আমরা আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা সম্প্রসারণ, মানুষের অন্যান্য চাহিদার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।’
তালিবানের সহিংসতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সহিংসতা আমাদের নীতি নয়। যদি কেউ বিক্ষোভ করতে চায়, তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তাদের অনুমতি নেওয়া উচিত এবং বলা উচিত যে বিক্ষোভ করা হবে।’
আফগান প্রতিরোধ যোদ্ধা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহের ভাই রুহুল্লাহ আজিজিকে তালিবান হত্যা করার পরদিন শিরশ্ছেদের ওই ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছে। দেশটির পাঞ্জশির উপত্যকায় তাকে হত্যা করে তালিবানের যোদ্ধারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানের এমন সহিংস চেহারা পুনরায় ফিরে আসবে এমন আশঙ্কা বরাবরই ছিলো। যতই তালিবানরা ক্ষমা প্রার্থনা করুক কিংবা নিজেদের পরিবর্তন নিয়ে আস্থা দিক, তাতে করে তাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা সম্ভব ছিলো না। এখন একে একে তালিবানের বর্তমান রূপ বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। এতে তাদের পশুর মত অমানবিক ও কট্টরপন্থী আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পুনরায় ২০ বছর আগের মত অবস্থানে ফিরে যাবে। এ পরিস্থিতি রুখতে বিশ্বের সংশ্লিষ্টদের দ্রুত তালিবানদের দিকে নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৮২৮
আপনার মতামত জানানঃ