আফগানিস্তানে তালিবান সরকারের অধীনে নারীদের অধিকার হারানোর শঙ্কা সেই শুরু থেকেই। সময় যতো গড়াচ্ছে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে সেই শঙ্কা। এমনকি নতুন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যে নারী প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে না, সেটির ইঙ্গিত আগে থেকেই দিয়েছেন গোষ্ঠীটির নেতারা। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি একেবারেই থাকছে না বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমতাবস্থায় নিজেদের অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছেন আফগান নারীরা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন আফগান নারীরা। এর বাইরে কাবুলের বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় প্রত্যেকের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড শোভা পায়। সেগুলোতে লেখা- ‘নতুন সরকারের মন্ত্রীসভায় নারীর উপস্থিতি চাই’, ‘পুরুষের সমান নারীর অধিকার চাই’, ‘আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা, আমাদের শক্তির ফল’।
এদিকে, চাকরি করতে দিলে বোরকাও পরতে রাজি বলে জানালেন আফগান মহিলারা। তালিবদের প্রতি এক বিশেষ বার্তায় তারা জানান, প্রয়োজনে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখার ‘অপছন্দের শর্তে’ রাজি হতেও তাদের আপত্তি নেই। তবে মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে ফেরার অধিকার দিতে হবে। সন্তানদের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার প্রাপ্য অধিকার দিতে হবে।
তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের হেরাটে গতকাল বৃহস্পতিবার এই দাবিতেই এক প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেন ৫০ জন আফগান মহিলা। তালিবান তাদের বাধা দিয়েছে বলে শোনা যায়নি।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, তারা তাদের অধিকার বুঝে নিতে এসেছেন এবং অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। যদিও এ ব্যাপারে তালিবদের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
হেরাটে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী আফগান মহিলারা অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওরা যদি আমাদের বোরকা পরতেও বলে, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের কাজে ফিরতে দেওয়া হোক। মেয়েদের স্কুলে যেতে দেওয়া হোক।’’
এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সালে তালিবান সরকারের অধীনে নারীদের অধিকার সম্পূর্ণ হরণ করা হয়। কেনো মেয়ে স্কুলে যেতে পারতো না, বাইরে কাজ করতে পারতো না। সবাইকে বোরকা ও হিজাব পরিধান করতে হতো এবং বাইর হতে হলে পরিবারের একজন পুরুষ সদস্যকে বাধ্যতামূলত সঙ্গে রাখা লাগতো। এছাড়া তাদের জোর করে বাল্যবিবাহ দিতো তালিবান শাসকগোষ্ঠী।
তবে এবার ক্ষমতায় এসে তালিবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ইসলামি আইনের অধীনে তারা এবার নারীদের অধিকার নিশ্চিত করবে। যদিও সেটিতে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না আফগান নারীরা।
এর মাঝেই গত মাসেই তালিবান নির্দেশ দিয়েছে, নারীরা যেন আপাতত ঘরে থাকে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নারীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়, তা অনেক তালিবান সদস্য এখনো জানে না। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরই নারীরা বাইরে কাজের সুযোগ পাবে। তবে এটাকে তালিবানের এক প্রকার কৌশল বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানের আফগান দখলের পর থেকেই দেশটিতে নারীদের অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। অত্যাচার নিপীড়নের পাশাপাশি বাড়ি থেকে কম বয়সী নারীদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া এমনকি মৃতদের ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে তালিবানের বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রা থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। কর্মজীবী নারীদের উপর নেমে আসছে নিয়মের খড়গ। এবার তাই নিজেরাই রুখে দাঁড়াচ্ছেন আফগান নারীরা। বিক্ষোভে নেমে আসছেন রাস্তায়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০২৫
আপনার মতামত জানানঃ