আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী দমনের নামে চালানো ড্রোন হামলায় বেসামরিক নিহত হবার ঘটনার দায় যুক্তরাষ্ট্রকে নিতে হবে বলে জানাল মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতকাল সোমবার এ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি মার্কিন ড্রোন হামলার নিন্দা করে এমন বক্তব্য দিয়েছে। কাতারের গণমাধ্যম আল-জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে।
মার্কিন ড্রোন হামলায় বেসামরিক নাগরিক ও শিশু নিহত হওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রকে ড্রোন হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে।
কারণ, দু’দশক ধরে আফগানিস্তান ও অন্যান্য দেশে মার্কিন ড্রোন হামলায় কত ব্যক্তি নিহত হলো তা নিয়ে জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা না করেই তারা তাদের কার্মকাণ্ড চালু রেখেছে। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক বিষয় যে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনও গোপনে এ ধরনের বিমান ও ড্রোন হামলা চালু রেখেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নির্বাহী পরিচালক পল ও’ব্রায়েন এ বিষয়ে বলেন, মার্কিন নাগরিকদের কোনো কিছু না জানিয়েই আফগানিস্তান ও অন্যান্য দেশে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি তারা মার্কিন জনগণকে এ তথ্যও জানায়নি যে এসব ড্রোন হামলায় কত মানুষ নিহত হয়েছে। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক বিষয় যে বাইডেন প্রশাসনও জনগণকে কোনো কিছু না জানিয়ে এ ধরনের বিমান ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে।
যা ঘটেছিল
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে গত রবিবার (২৯ আগস্ট) মার্কিন সামরিক বাহিনীর ড্রোন হামলায় একই পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জনই শিশু। নিহতদের একজন স্বজন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হচ্ছেন জামারা (৪০), নাসির (৩০), জমির (২০), ফয়সাল (১০), ফারজাদ (৯), আরমিন (৪), বেনিয়ামিন (৩), আয়াত (২) এবং সুমাইয়া (২)।
গত রোববার মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড জানায়, আত্মরক্ষার স্বার্থে কাবুলে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কাবুল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টিকারী একজন আত্মঘাতী হামলাকারীকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।
মার্কিন বাহিনীর দাবি, সে দিন আইএস সদস্য বহনকারী একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ওই ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল। তবে হামলায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির বিষয়টি তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)।
এদিকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত একজনের ভাইয়ের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের মধ্যে ২ বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশু রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, নিহতরা সবাই খুব সাধারণ পরিবারের সদস্য।
তিনি আরও বলছেন, আমরা আইএস বা দায়েশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই এবং ওই বাড়িতে আমার ভাইয়েরা তাদের পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করতো। এদিকে প্রতিবেশী ও হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা সিএনএন’কে জানিয়েছেন, কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় কয়েকজন নিহত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
এক প্রতিবেশী সিএনএনকে জানান, ‘হামলার পর ওই বাড়িতে আগুন ধরে যায় এবং প্রতিবেশীরাসহ আশপাশে থাকা মানুষ আগুন নেভাতে সেখানে পানি নিয়ে যান। হামলায় নিহত পাঁচ থেকে ছয়জনের মৃতদেহ অমি সেখানে দেখেছি। নিহতদের মধ্যে ওই পরিবারের পিতা, একজন অল্পবয়সী বালক ও দু’জন শিশুও ছিল। হামলায় তাদের মৃতদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া সেখানে দু’জন মানুষ আহত হয়েছেন।
অবশ্য গত রোববার রাতেই নিজেদের ভুল স্বীকার করে মার্কিন সামরিক বাহিনী জানায় যে, তাদের হামলায় বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নিরাপরাধ মানুষের হতাহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে ব্যথিত বলেও দাবি করেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন বিল আরবান।
সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র বিল আরবান অবশ্য দাবি করেছেন, ‘বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িতে হামলা চালানোর ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। টার্গেটকৃত গাড়ির ভেতর প্রচুর বিস্ফোরক থাকায় হামলার পর বিশাল বিস্ফোরণ হয়। তার জেরেই এই প্রাণহানি ঘটেছে।’
আহাদ নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি নিহত পরিবারটির প্রতিবেশী ছিলেন। তারা তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছিলেন। আগুন নেভানোর জন্য নিয়ে এসেছিলেন পানি। সেখানে তিনি দেখেন ৫-৬ জন মানুষ মৃত পড়ে আছেন। যাদের মধ্যে বাবা, তার দুই সন্তান ও আরেকজন ছেলে ছিলেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭১০
আপনার মতামত জানানঃ