শত কোটি টাকা ব্যয় করে প্রকল্পের শুরু করা এবং তা অসমাপ্ত রেখে দিয়ে মানুষের করের টাকা জলে ঢালা যেনো খুব সহজ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রকল্প অসমাপ্ত পড়ে আছে যেসব বাস্তবায়নের জন্য শত কোটি ব্যয় করা হয়েছে। এসব টাকা এসেছে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে, প্রকল্প বাস্তবায়িত না হবার জন্য ভোগান্তিও সাধারণ মানুষের। এসব অদেখা করে চলছে দেশ ডিজিটাল হতে।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা প্রায় যোগাযোগহীন বলে এই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, একটি সড়ক নির্মাণের। সে লক্ষ্যে ২০১০ সালে ১১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিলো। কাজ শুরু হয়েছিলো ২০১১ সালে। ২০১৭ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি অসমাপ্ত থেকে যায়। ফলে জেলা শহর সুনামগঞ্জসহ সারা দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ওই উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের এই উপজেলাটির যোগাযোগের দুর্ভোগ ঘোচানোর প্রকল্পটি অসমাপ্ত থাকায় বর্ষায় নৌকা আর শুকনা মৌসুমে হেঁটেই যাতায়াত করছেন জেলার বেশির ভাগ মানুষ। সুনামগঞ্জের সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা শাল্লা। এ উপজেলার মানুষ জেলা সদরে যাতায়াত করেন পাশের দিরাই উপজেলা দিয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখন শুকনা মৌসুমে ভাড়ায় কিছু মোটরসাইকেল চলে। এতে জনপ্রতি ১০০ টাকা দিতে হয়। তবে গরিব মানুষের পায়ে হেঁটেই পার হতে হয়। এখন নৌকায় শাল্লা থেকে দিরাই আসতে ভাড়া লাগে ৫০ টাকা। ইদানীং ভাড়ায় স্পিডবোট চলছে। এতে জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা। এটিও বড় লোকদের যাতায়াতের জন্য।
দিরাই পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে দক্ষিণমুখী একটি সড়ক গেছে শাল্লার দিকে। কিছুটা সামনে এগোলে একটি সড়ক বাঁ পাশে গেছে বাউল শাহ আবদুল করিমের বাড়ির দিকে। অন্যটি ডান দিকে শাল্লায়। সড়কের পিচঢালাই উঠে গিয়ে অনেক স্থানে গর্ত হয়ে আছে। সড়কের বায়ে বরাম হাওর, ডানে উদগল হাওর। সড়ক ভাঙাচোরা হলেও দিরাই থেকে মোটরসাইকেলে করে সড়কের টেলিফোন বাজার পর্যন্ত এখন যাওয়া যায়। সড়কের তলবাউসি গ্রামের কাছে একটি সেতু ভেঙে গেছে। এরপর আর পাকা সড়ক নেই।
কিছু দূর এগোলে চোখে পড়ে সড়কের বেশ কিছু অংশ ভেঙে খালের মতো হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, শুকনা মৌসুমে এর পাশে ফসল রক্ষার বাঁধ দেওয়া হয়। এই বাঁধের ওপর দিয়েই তখন চলাচল করে মানুষ। কিন্তু বর্ষায় সেই সুযোগ থাকে না। মাছুয়াখাড়া নামের এই স্থান সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর ধনপুর গ্রামের পাশে আরেকটি সেতু ভেঙে পড়ে আছে পানিতে। স্থানীয়রা বলছেন, যেখানে সেতু-কালভার্টের দরকার নেই, সেখানে করা হয়েছে। আবার যেখানে দরকার ছিল, সেখানে করা হয়নি।
ধনপুর গ্রামের বাসিন্দা লুৎফুর রহমান এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘কাজ শুরু হওয়ায় আশা করেছিলাম, হয়তো দিরাই-শাল্লা সড়ক হবে। কিন্তু কিছু কাজ হওয়ার পর কাজে ধীরগতির কারণে হাওরের ঢেউয়ে অনেক স্থান ভেঙে গেছে। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে কয়েকটি সেতু ও কালভার্ট।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এই প্রকল্প এক যুগ পেরুলেও পূর্ণতার মুখ দেখেনি। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমেই একত্রিত হয়ে শাল্লা উপজেলা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে শাল্লার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এই বছরের ২৫ মে দীর্ঘ মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে। এসময় উপস্থিত সাধারণ জনতার দাবি ছিলো তাদের শাল্লা দিরাই সড়ক চাই।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮৩৩
আপনার মতামত জানানঃ