বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে বড় একটি কারণ অধিক পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ। এর জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোকে দায়ী করেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন গবেষণায়ও এর সত্যতা মিলেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের গবেষণায় জানা গেছে, গড়ে ৩ দশমিক ৫ জন মার্কিন তার জীবদ্দশায় যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখেন, সেই পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেন ২৫ জন ব্রাজিলিয়ান বা ১৪৬ জন নাইজেরিয়ান।
এই গবেষণা বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেশে দেশে মানুষ তার জীবনাচরণে কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখে, সেটা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি বিশ্লেষণ করে ‘কার্বন নিঃসরণের সামাজিক প্রভাব’ বিষয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনে সম্ভাব্য মৃত্যুর সংখ্যার হিসাব তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই গবেষণায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন নাগরিক জীবদ্দশায় তার জীবনাচরণে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখেন, তা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়িয়ে একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ ঘটে, তার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ৯ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন নাগরিক জীবদ্দশায় তার জীবনাচরণে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখেন, তা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়িয়ে একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ ঘটে, তার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ৯ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
গবেষণায় উঠে আসে, বায়ুমণ্ডলে প্রতি ৪ হাজার ৪৩৪ মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হার ২০২০ সালের চেয়ে বেড়ে গেছে। যে পরিমাণ নিঃসরণ বেড়েছে তার কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে একজন ব্যক্তির অকালমৃত্যু হতে পারে।
গড়পড়তা মার্কিন কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গত বছরের তুলনায় ৪০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছে। এর ফলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ ৯০৪ জন মানুষ মারা যেতে পারে বলে ধারণা করছেন গবেষকেরা। তবে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার কমাতে পারলে চলতি শতাব্দীর শেষ দিকে বিশ্বের প্রায় ৭ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে বায়ু দূষণও প্রত্যক্ষভাবে মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। গত ফেব্রুয়ারিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৮০ লাখের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।
গবেষণাপত্রের লেখক কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থ ইনস্টিটিউটের ডেনিয়েল ব্রেসলার বলেন, ‘এখন যে জলবায়ু নীতিমালা রয়েছে, সেটা আরও কঠোর করলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জীবন বাঁচানো সম্ভব। আমি অবাক হয়েছি, এত বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে! এই সংখ্যা নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকতে পারে, তার কারণে মৃত্যুর সংখ্যাটা কম হতে পারে, আবার বেশিও হতে পারে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, উষ্ণায়ন বা দূষণ শুধু বিশ্বস্বাস্থ্যের জন্যই উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি নীতিগত সমস্যাও বটে৷ প্রথম বিশ্বের উন্নয়নের অভিশাপ কুড়োতে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে৷ যাদের যান্ত্রিকভাবে উন্নয়নের কোনও সুযোগ নেই, প্রাকৃতিক সম্পদের উপর তাদের অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে ব্রিটেন, আমেরিকার মতো ধনী থেকে ধনীতর দেশগুলি৷ অর্থাৎ, এসব দেশ সবদিক থেকেই মার খাচ্ছে ব্যাপকভাবে৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৪
আপনার মতামত জানানঃ