আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। সেই ভিয়েনায় আমেরিকান কূটনীতিক এবং দূতাবাসের বিশ জনের বেশি কর্মকর্তা যেসব উপসর্গের কথা বলেছেন, তার সাথে হাভানা সিনড্রোম বা হাভানা উপসর্গ নামে পরিচিত অসুস্থতার মিল রয়েছে।
খবরে বলা হয়, আক্রান্তদের মধ্যে কূটনীতিকের পাশাপাশি দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মচারীরাও রয়েছেন। নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি করা এই রোগের যেসব উপসর্গ দেখা গেছে, তা মস্তিষ্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসবের সাথে মিল রয়েছে হাভানা সিনড্রোম বা হাভানা উপসর্গের। প্রশাসনিক এইসব কর্মচারীরা পরপর নানাধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার হওয়ার ঘটনা তদন্ত করে দেখছে মার্কিন সরকার।
কূটনীতি এবং গুপ্তরবৃত্তি দুটোর কেন্দ্র হিসাবেই ভিয়েনা সুপরিচিত। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসেন। তার পর থেকে একে একে এই অজানা রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন দূতাবাসের কর্মীরা। নানা উপসর্গ স্পষ্ট হলেও আজ অবধি রোগটি নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি মার্কিন বিজ্ঞানীদের পক্ষে।
এসব উপসর্গ কেন হচ্ছে তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি, তবে আমেরিকান বিজ্ঞানীরা বলছেন খুব সম্ভবত সরাসরি মাইক্রোওয়েভ বিকিরণের কারণে এসব উপসর্গ তৈরি হচ্ছে। মাইক্রোওয়েভ হল অতি ক্ষুদ্র কম্পাঙ্কের তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। তবে এ সমস্যা থেকে মুক্তির কোনো উপায় বা গবেষণার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির বিষয়ে কিছু এখনো জানাতে পারেননি তারা।
ভিয়েনায় দূতাবাস কর্মী ও কূটনীতিকদের রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর প্রথম প্রকাশিত হয় শুক্রবার নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে। এরপর আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তর এই খবর নিশ্চিত করে এবং জানায় তারা বিষয়টি নিয়ে ‘খুবই জোরেশোরে তদন্ত চালাচ্ছে।
রয়টার্স বার্তা সংস্থা জানাচ্ছে অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বলছে, তারা বিষয়টির মূলে যাবার চেষ্টায় তারা আমেরিকান কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে।
দীর্ঘ কাল ধরেই ভিয়েনা বিভিন্ন ধরনের কূটনীতির একটা মূল কেন্দ্র। এছাড়াও নানা ধরনের গুপ্তচরবৃত্তির কেন্দ্র হিসাবে ভিয়েনার নামডাক আছে। বিশেষ করে শীতল যুদ্ধের সময় ভিয়েনায় বিভিন্ন ধরনের গুপ্তচর কর্মকাণ্ড হয়েছিল।
এছাড়া, আমেরিকার ভিয়েনায় বিশাল কূটনৈতিক উপস্থিতি রয়েছে। এই শহরে বর্তমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০১৫ সালে সম্পাদিত ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহাল নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি নির্বাচিত হলে চুক্তি পুনর্বহাল করবেন। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন এবং চুক্তি পুনর্বহালের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এর বেশির ভাগই হয় ভিয়েনাতে।
জুন মাসে আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এই রহস্যজনক রোগের কারণ নির্ধারণ করতে ব্যাপক পর্যালোচলনা কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দেন।
দুশ্চিন্তার হলো পৃথিবীর অন্য কয়েকটি দেশ থেকেও একই ধরনের রহস্যজনক উপসর্গে আমেরিকানদের আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে, তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, কিউবার ঘটনার পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আমেরিকান এখন আক্রান্ত হলেন ভিয়েনায়।
জানা যায়, এই হাভানা উপসর্গ প্রথম দেখা গিয়েছিল কিউবায় ২০১৬-১৭ সালে। সে সময় হাভানায় আমেরিকান ও ক্যানাডার দূতাবাসের কর্মীরা নানা ধরনের অসুস্থতার অভিযোগ করেছিলেন- যার মধ্যে ছিল মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, কানে শুনতে না পাওয়া এবং একরকম উৎকণ্ঠা, যেটাকে তারা ব্যাখ্যা করেন বোধশক্তি ঘোলাটে হয়ে যাওয়া হিসাবে।
আমেরিকা সে সময় অভিযোগ করেছিল, কিউবা শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। কিউবা এ অভিযোগ জোরের সাথে অস্বীকার করেছিল এবং ওই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা খুবই বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এরপর আমেরিকায় ২০১৯ সালে চালানো একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, কিউবায় অসুস্থ হয়ে পড়া কূটনীতিকদের ‘মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকতা’ দেখা দিয়েছে। কিন্তু কিউবা ওই গবেষণা প্রতিবেদন নাকচ করে দেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১২২৭
আপনার মতামত জানানঃ