গরুর মাংস বিক্রি ঠেকাতে ভারতের আসাম রাজ্যের বিধানসভায় এক নতুন বিল উত্থাপিত হয়েছে। এই বিল পাশ হলে হিন্দু, শিখ ও জৈন সম্প্রদায়ের মন্দির চত্বরের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে গরুর মাংস এবং গরুর মাংসজাত পণ্য কেনাবেচা নিষিদ্ধ হবে।
আসাম বিধানসভায় গো-সুরক্ষায় নতুন এই বিল পেশ করা হয়। এই বিলে মন্দির চত্বরের ৫ কিলোমিটারর মধ্যে গোমাংস এবং গোমাংসজাত পণ্য কেনাবেচা নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি হিন্দু, জৈন, শিখ এবং গোমাংস না খাওয়া সম্প্রদায়ের বাস যে এলাকায়, সেখানেও এই নিষেধাজ্ঞা চালুর প্রস্তাব রয়েছে ওই বিলে।
ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, আসাম গো-সুরক্ষা বিল ২০২১ নামের ওই বিলটি গতকাল সোমবার (১২ জুলাই) বিধানসভায় পেশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। বিলটিতে গোহত্যা, গোমাংস ভক্ষণ এবং বেআইনি ভাবে গরু পাচার নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের একাধিক রাজ্যে গোহত্যা বন্ধ করতে আইন থাকলেও, কোনও জায়গায় গোমাংসের দোকান থাকা চলবে না, এমন নির্দেশিকা এই প্রথম।
৫ কিলোমিটারের মধ্যে গোমাংস নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ওই ৫ কিলোমিটার কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে? যেখানে ইচ্ছে পাথর ফেলে মন্দির বানিয়ে ফেলতে পারে যে কেউ। গোটা বিষয়টাই সন্দেহজনক। এর ফলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়বে বই কমবে না।
এ প্রসঙ্গে আসাম বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত সাইকিয়া জানান, বিলটিতে অনেক সমস্যা রয়েছে। তাই আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন তারা।
দেবব্রত বলেন, ৫ কিলোমিটারের মধ্যে গোমাংস নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ওই ৫ কিলোমিটার কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে? যেখানে ইচ্ছে পাথর ফেলে মন্দির বানিয়ে ফেলতে পারে যে কেউ। গোটা বিষয়টাই সন্দেহজনক। এর ফলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়বে বই কমবে না।
পাশাপাশি বিলটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের বিধায়ক আমিনুল ইসলামও। তার বক্তব্য, গো-সুরক্ষায় এই বিল আনা হয়নি। মুসলমানদের আবেগে আঘাত করাই বিলটির লক্ষ্য, যাতে আরও বিভাজন তৈরি হয়। আমরা এই বিলের বিরোধিতা করছি। সংশোধন করতে আর্জি জানাব।
রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে যেমন নির্দিষ্ট করে গাভী হত্যা নিষিদ্ধ রয়েছে, গো-সুরক্ষা আইনে মোষকে বাইরে রাখা হয়েছে, অসম সরকারের নয়া বিলে সে রকম নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।
এর আগে, আসামে ১৪ বছরের বেশি বয়সি গরুদের হত্যায় কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু ১৯৫০-এর সেই আইন গো-সুরক্ষায় যথেষ্ট নয় বলে মত রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রীর।
এদিকে ইতোমধ্যে বিধান সভায় এ নিয়ে বিরোধিতার ঝড় উঠেছে। বিরোধীদের একাংশ ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের দাবি, এই বিল প্রয়োগ করা হলে সাম্প্রদায়িক হানাহানি আরও বাড়বে, বৈধভাবে গো-মাংসের ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৫৪
আপনার মতামত জানানঃ