শুধু ইসরায়েল নয়, জেরুজালেম ও পশ্চিমতীরে অবৈধ ইহুদি বসবাসকারীরাও ফিলিস্তিনিদের উপর যুদ্ধাপরাধ করছে বলে জানিয়েছ জাতিসংঘ। এর মধ্যেই আবারও যুদ্ধের ময়দান হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিন। যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনিদের পশ্চিম তীরে আবারো বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি এবং টিয়ার শেল ছুঁড়েছে তেল আবিব। এদিকে, বেশ কয়েক দিন ধরেই প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল ফিলিস্তিনের রাজপথ। এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলি অবৈধ বসতকারীও যুদ্ধাপরাধ করছে
জেরুজালেম ও পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন করে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে অবৈধ ইহুদি বসবাসকারীরা সেগুলো দখলের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ করছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারী একটি দল এ মন্তব্য করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দেয়া ভাষণে শুক্রবার অধিকৃত ফিলিস্তিনে নিয়োজিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ কর্মকর্তা মাইকেল লিন্ক এ কথা বলেন।
এতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক এ কর্মকর্তা আরও বলেন, তাকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তদন্ত কাজে কোনো প্রকার সহযোগিতা তো করেইনি, বরং তাকে বয়কট করে জাতিসংঘকে অপমান করেছে।
মাইকেল লিন্ক বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি দখলে অংশ নিয়ে একই ধরনের যুদ্ধাপরাধ করেছে অবৈধ ইহুদি বসবাসকারীরা। নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর নির্যাতন এবং তাদের বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সজ্ঞা অনুসারে যুদ্ধাপরাধ করেছে।
পৃথক এক বিবৃতিতে লিন্ক আরও বলেন, দখলদার ইসরাইল গত ৫৪ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর এ ধরণের যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তারা পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি দখল করে ৩০০ অবৈধ বসতি নির্মাণ করেছে, যাতে ৬ লাখ ৮০ হাজার ইহুদি বসবাস করছে। ইসরাইল কাঠামোগত যুদ্ধাপরাধ করে ফিলিস্তিনিদের একের পর এক ভূমি দখল করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তার তদন্ত রিপোর্ট এবং ইসরাইলের অবৈধ দখলদারিত্বের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরবেন।
ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের হামলা
গতকাল শুক্রবার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৩৭৯ ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩১ জন আহত হয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর তাজা গুলিতে। অবৈধ নিরাপত্তা চৌকির বিরুদ্ধে শুক্রবার পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের একটি বিক্ষোভ মিছিলে গুলি চালালে আহত হন তারা।
জানা গেছে, পশ্চিমতীরের বেইতা শহরে ফিলিস্তিনিরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভকারী করছিলেন এবং ইসরায়েলি বাহিনীর দিকে ঢিল ছুঁড়তে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমা’র নামাজের পর ইসরায়েলি বাহিনী মিছিল লক্ষ্য করে তাজা গুলি ও রাবারে মোড়ানো স্টিল বুলেট ছোঁড়ে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর এই গুলিবর্ষণের ঘটনায় ৩৭৯ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তাজা গুলিতে আহত হয়েছেন ৩১ জন ফিলিস্তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
শুক্রবার একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে ফিলিস্তিনের অন্য দুই শহর কাফর কাদুম ও বেইত দাজনে। সেখানে বিক্ষোভরত কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী।
‘স্টেপ ডাউন আব্বাস’
‘স্টেপ ডাউন আব্বাস’ (আব্বাস সরকার নিপাত যাক) স্লোগানে ভারি হয়ে উঠছে ফিলিস্তিনের বাতাস। ফিলিস্তিনিদের দাবি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইসরায়েলের হয়ে কাজ করছেন। এবার এ আন্দোলনের পালে আরও বাতাস দিলো ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লে মনডে’।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমটি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের তীব্র নিন্দা করেছে। তাদের দাবি, মাহমুদ আব্বাস স্বৈরাচারী নীতি, অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জনগণের অধিকার নষ্ট করছেন। পত্রিকাটি বলছে যে, প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তার জাতির স্বাধীনতার পথে বাধা।
ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বেশ কয়েকটি নির্বাচন বাতিল করেছেন এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের মতো সহিংসতা অব্যাহত রেখেছেন। এ সহিংসতা দেশটির জনগণের স্বাধীনতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলস্বরূপ, মানুষের দৃষ্টিতে এখন তার প্রশাসনের কোনো মূল্য নেই।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, দেশের ভালোর জন্যে মাহমুদ আব্বাসের এখন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। আব্বাসের সাম্প্রতিক প্রতিটি কার্যকলাপ দখলদার ইসরায়েলের স্বার্থে।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২০০৫ সাল থেকে ফিলিস্তিনের ক্ষমতায় আছেন। ক্ষমতার লাভের শুরুর সময়ে ভালো থাকলেও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে বিতর্কের সম্মুখীন হচ্ছেন। মাহমুদ আব্বাসের নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পর নির্বাচন প্রত্যাহার করাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এর প্রধান কারণ মনে করছেন।
তবে ৮০ বছর বয়সী মাহমুদ আব্বাস সম্পর্কে অনেক ফিলিস্তিনির সহানুভূতিও আছে। তিনি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে কখনো আত্মসমর্পণ করেননি। ট্রাম্প এবং ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পশ্চিম জর্ডানকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করলে মাহমুদ আব্বাস তাদের কাছে কোনো নমনীয়তা দেখাননি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪২১
আপনার মতামত জানানঃ